
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: মসজিদে মসজিদে মাইকিং, হাট বাজারে মাইকিং, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পদ, মন্দির পাহারা, সুস্থ ভাবে পূজা উদযাপন, চাঁদাবাজি, দখল, লুটপাট-ভাঙচুর বন্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিক মিটিং , প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নে কমিটি করে, উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নানা দিক নির্দেশনা প্রদান। এছাড়া পুলিশকে অ্যাকটিভ হওয়ার জন্য থানাগুলোতে যোগাযোগ, ট্রাক-বাস মালিকদের সঙ্গে মিটিং করে যানবাহন চালু , জুয়েলারি সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে তাদের দোকানপাট খোলা , মনসুর আলী মেডিকেলসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে ৫ আগষ্ট থেকে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বাচ্চু, বর্তমান জেলার শান্তি শৃঙ্খলা ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে কথাগুলো বলছিলেন, সিরাজগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি শামিম খান।
তিনি বলেন, হাসিনার পদত্যাগের পরপরই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে বিএনপির এই নেতা। তিনি চাঁদাবাজি, দখল, লুটপাট ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। যে কারণে সিরাজগঞ্জ জেলায় সহিংসতা অনেকটাই কম হয়েছে। রক্ষা পেয়েছে জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ। নিরাপদে রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। এরই মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে সিরাজগঞ্জের জনজীবনে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ
জানান, ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহর পুরোপুরি দখল করে নেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই দিন বেশ কিছু সহিংসতা ও ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু স্থাপনা। আওয়ামী লীগের কাছে হামলার শিকার হয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন ছাত্র-জনতা। ওই দিনের ঘটনায় পুলিশসহ ২৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরে তিন যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মী রয়েছে।পরদিন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ। পাড়ায় মহল্লায় আনন্দ মিছিল ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনই জেলা জুড়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে, এসময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, নানা মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক আহসান হাবিব উজ্জ্বল বলেন,৫ আগষ্ট পরবর্তীতে তিনি শহরের মসজিদে মসজিদে মাইকিং, রিকশা যোগে মাইকিং করে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন। সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে বিএনপি নেতাকর্মী ও আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে বিরত থাকতে বলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিটিং করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে সংযত থাকার জন্য নিজ ফেসবুক পেইজে নিয়মিত ভিডিও বক্তব্য আপলোড করে প্রচার করে যাচ্ছেন। জনজীবন স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কারণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ৪ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে জেলায় তেমন বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি। সাইদুর রহমান বাচ্চুর নেতৃত্বে বিএনপি কার্যকর ভূমিকা রাখায় আমরা নিরাপদ রয়েছি। তিনি শুরু থেকেই সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে জেলায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সনাতনী ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় সুস্থ ও সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন , এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো নিরাপদেই রয়েছে।
জুলাই-আগস্টে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, আমি শহীদ জিয়ার সৈনিক। আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমার নেতা তারেক রহমান, তিনি ভার্চুয়ালি আমাকে সবসময় দিক নির্দেশনা দিতেন। দেশের মানুষ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অগ্রসর হতে থাকেন। জুলাই মাসের শুরু থেকেই কেন্দ্র থেকে নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। আমি জেলা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলসহ সকল অঙ্গসংগঠন ও ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। এক পর্যায়ে ৪ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের টার্নিং পয়েন্টে দিন ঘনিয়ে আসে। জেলার সকল রাজপথ দখল করে নেয় ছাত্র-জনতা ও বিএনপির কর্মীরা। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশ উত্তাল হয়। পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের।
তিনি বলেন, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ পদত্যাগের পর এক শ্রেণির লুটেরা লুট করার জন্য বের হয়েছিল। এ অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনার পতনের পরপরই মসজিদে মসজিদে গিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়েছি, আমার বক্তব্য ছিল, আপনারা ধৈর্য্যশীল হবেন, কেউ কারও বাড়িঘর লুটপাট করবেন না, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করবেন না, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আক্রমণ করবেন না, কারও বাড়িঘরে আগুন দেবেন না। বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ এগুলো করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে এগুলো করেছি। তারপরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত কয়েকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট-ভাঙচুরের খবর আমাদের কানে আসছিল, সেটা বন্ধ করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেছি। এরপর প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নে কমিটি করে দিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সংযত থাকার নির্দেশনা দিই। পুলিশকে অ্যাকটিভ হওয়ার জন্য থানাগুলোতে যোগাযোগ করেছি। ট্রাক-বাস মালিকদের সঙ্গে মিটিং করে তাদের যানবাহন চালু করতে বলেছি, আশ্বস্ত করেছি। জুয়েলারি সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে তাদের দোকানপাট খুলতে বলেছি। মনসুর আলী মেডিকেলসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতি রাতে পাহারা বসিয়েছি। এসব কারণে সিরাজগঞ্জে তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটে নাই। বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গভাবে মাঠে থেকেছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররাও মাঠে থেকেছেন। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’