
নিজস্ব প্রতিবেদক: আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরপরই আদালত বেনজীর আহমেদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশনা দিয়েছেন। এই দুই ঘটনায় সারা দেশ তোলপাড় চলছে। আজিজ আহমেদ সাবেক সেনাপ্রধান। আর বেনজীর আহমেদ সাবেক পুলিশ প্রধান। দুজনই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। সরকারের বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। শীর্ষ পদে থেকে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন বলে যে অভিযোগ গুলো উঠেছে, সেই অভিযোগ গুলো সরকারকেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে।’
গত ২০ মে মধ্যরাতের পর আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে।
মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ তার তিন ভাইকে সামরিক ব্যবসা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন। এছাড়াও তাদের দণ্ড মওকুফ করার ক্ষেত্রে তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজিজ আহমেদ একসময় বিজেপির মহাপরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাপ্রধান হন। এই দুই সময় কেনাকাটায় তার তিন ভাইকে তিনি কোন রকমের সহায়তা দিয়েছেন কি না সেটি তদন্তের দাবি রাখে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনের ফলে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। তা হলো আজিজ আহমেদ কী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ব্যবহার করে অনিয়ম করেছেন? এটি যদি তিনি করে থাকেন, তাহলে সেটি সরকারের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।
একই রকম অবস্থা বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে। তিনিও আজিজ আহমেদের মতো র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশে প্রচণ্ড প্রভাবশালী এই ব্যক্তি সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকে তাকে সরকারের নীতি নির্ধারক হিসেবেও বিবেচনা করতেন। কিন্তু সেই বেনজীর আহমেদের বেশুমার দুর্নীতির খবর সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন উঠেছে যে, শীর্ষ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ধরণের দুর্নীতি কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করেছে এবং তদন্তের পরই বোঝা যাবে যে, তার অপরাধ কতটুকু, তিনি আসলে দুর্নীতি করেছেন কি না। কিন্তু শীর্ষ পদে থাকা এই দুই ব্যক্তির অপরাধের ঘটনা নিয়ে সারা দেশ তোলপাড় চলছে।’
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ হন, সরকারের সঙ্গে যাদের গভীর সম্পর্ক হয়, তারা কি দুর্নীতির সুযোগ পান? সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তারা কী অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা করা শুরু করেন এবং এই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে কী ক্ষমতার অপব্যবহার হয়? আজিজ আহমেদ এবং বেনজীর আহমেদের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিষয়গুলো সামনে এসেছে।
আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় রয়েছে এবং এই সময় বিভিন্ন শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব নিয়োগই যে, যোগ্যতার বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। অনেকেই নানা কারণে, নানা সমীকরণে শীর্ষ পদ দখল করেছেন। শীর্ষ পদ দখল করে তারা যদি যোগ্যতার পরিচয় না দেন, দুর্নীতি করেন তার দায়িত্ব কে নেবে, সেই প্রশ্নটি অত্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে। যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে যাচ্ছেন তারা প্রভাব বিস্তার করা, দুর্নীতি করার সুযোগ বেশি পাচ্ছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুধু আজিজ আহমেদ বা বেনজীর আহমেদ না, অনেকেই অনেক রকম অনিয়ম করছেন বলে বিভিন্ন মহলে খবর আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, এই সমস্ত বিষয় গুলো সরকার কী নিমোর্হ ভাবে দেখবে’?
বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন পদে আছে তারা আইন, বিচারের ঊর্ধ্বে কেন থাকবে? তারা কেন জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে? আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো ইঠেছে সে অভিযোগ গুলো যেমন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা দরকার তেমনি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো নিমোর্হ তদন্ত দরকার। পাশাপাশি শীর্ষ পদে যারা থাকে তারা আসলে ওই পদে থেকে প্রভাব বিস্তার করেন, অন্যায় দুর্নীতি করেন কি না সে ব্যাপারে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা দরকার, থাকা দরকার জবাবদিহিতা। না হলে এই শীর্ষ পদের দুর্নীতির কালিমা সরকারের মুখেই লাগবে।’