নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪নং শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অসহায় মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত হলে তাৎক্ষনিক ঘটনাটির সত্যতা মেলে । তারপর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদে ওই উদ্যোক্তা কর্মস্থলে ফিরতে না পারায় ঘটনাটি জানাজানি হলে ইউনিয়ন জুড়ে নানান আলোচনা সমালোচনার গুঞ্জন উঠেছে। এরপর থেকেই জনকল্যাণে পরিষদে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা উদ্যোক্তার নানা অপকর্ম ফাঁস করতে শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে নানান অজানা গোপন তথ্য।
বিগত সময়ে চেয়ারম্যান সচিবদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দলীয় খোলস পাল্টিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে বলে একাধিকসূত্রে জানা যায়।
২০২০সালের শেষের দিকে শিয়ালকোল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারীর পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী। সে সময়ে দায়িত্বে থাকা সেক্রেটারী মুনির হোসেন আলোচনা থাকায় শিয়ালকোল বাজারে জনসম্মুখে মুনিরকে মারপিট করে উদ্যোক্তা ইউসুফ ও তাঁর একদলগুন্ডা বাহিনী। পরে এ বিষয়ে মামলা করা হলে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা দলীয় ইস্যু টেনে মিমাংসা করে দেন।
আরও জানা যায়, সদর উপজেলা থেকে দুঃস্থ অসহায় প্রতিবন্ধীদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী নিজেই বার লক্ষ টাকার ঘর হাতিয়ে নেন। হাসিনা সরকার পতনের পর পরেই সরকারি ঘরের সাথে থাকা নামফলকটি তুলে ফেলেন।
তাঁর পরিচালিত ব্যাংক এশিয়ায় জমাকৃত টাকা দীর্ঘদিন রাখার পর ভাতাভোগীদের অবগত করে থাকেন। ওই দীর্ঘ সময়ের ব্যাংকে থাকা লভ্যাংশ প্রতি তিন মাস পরপর অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। বাজেট ইস্যুতে প্রতি বছর কম্পিউটার টেবিল ল্যাপটপ কালিও অন্যান্য যন্ত্রাংশ বাবদ পরিষদের বাজেটের ক্রয়কৃত পণ্য গ্রহন করলেও অদৃশ্য কারনে সেগুলো উধাও হয়ে যায়। ছাত্রলীগ নেতা ও নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় পরিষদ ঘিরে আত্মীয় স্বজনের সমাঘম যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। যার কারনে অন্যায় ও অপকর্ম দেখেও মুখ খুলতে সাহস পায় না স্থানীয় ও ইউপি সদস্যেরা। এছাড়া ওয়ারিশিয়ান সনদ প্রদানের জন্য প্রতিটি সনদে অর্থ নেওয়া, প্রত্যেক জন্ম নিবন্ধন চেক দেওয়ার নামে অবৈধভাবে ৫০টাকা গ্রহন, ট্রেড লাইসেন্সের স্বজনপ্রীতি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও ভিজিডি আবেদনসহ সকল রকমের সরকারি ভাতা আবেদন কিংবা প্রত্যায়ন উদ্যোক্তার মাধ্যমে করাতে বাধ্য করা হয়। আবেদনকারী নিজে অথবা উদ্যোক্তা ব্যতীত সেন্টারের বাইরে কোন কম্পিউটার দ্বারা আবেদন করালে সেই আবেদন ইউনিয়ন পরিষদে গ্রহণ করা হয় না। জনসাধারণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার জন্য এমন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী। এছাড়াও উদ্যোক্তা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী, টিসিবি, ভিডাব্লিউবি, ভিজিডি ও ভিজিএফ, ৪০ দিনের কর্মসূচির তালিকায় আত্মীয় স্বজনের নাম দিয়ে অতিরিক্ত এসব সুযোগ গ্রহন করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
নাম না বলা শর্তে একাধিক ইউপি সদস্যেরা জানান, ডিজিটাল সেন্টারে ডিজিটাল ভাবে চুরির একটা মহাৎসব খুলে নিয়েছে উদ্যোক্তা ইউসুফ। নিজের ইচ্ছেমতো প্রজেক্ট তৈরী করে ও কারন অকারনে গরীব মানুষের কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা গ্রহন করে যা এককালীন দাঁড়ালে ২ থেকে ৩লাখ টাকা হয়ে যায়। ছোট ছোট এ বিষয়গুলো অনেকেই নজড়ে রাখতে পারে না। তবে মানুষের তোপের মুখে পড়লে তখন ইউপি সদস্যদের নাম বলে পাড় পেয়ে যায়। এবারের অন্যায়ে কঠিন জবাবের সম্মুখিন হয়েছে। এখন চাকুরি বাঁচাতে মানুষের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরছে। তবে অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বাঁচাতে তাঁকে দ্রুত অব্যাহিত দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত পরিষদ গড়তে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা। আরও বলেন, উদ্যোক্তার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন না করলে রাজনৈতিক প্রভাব বা দলীয় হস্তক্ষেপে আবারো পদ ফিরে পেয়ে অন্যায়কে ন্যায় পরিনত করে অপকর্ম চালিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী জানান, সচিব ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হুকুম ছাড়া কিছুই করা হয় না। ডিজিটাল সেন্টারে কম্পিউটার প্রিন্টার ও টেবিল বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে বলে কিছুই পাবেন না। এসব বিষয়ে সচিব সাহেব ভালো জানে। আর উদ্যোক্তা হিসেবে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহন করলে দোষের কি?