
নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে ঈদের নামাজে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বসতবাড়ী ও জীবিকা নির্বাহকারী গাড়িতে আগুন, সোনা ও রুপার গহনা লুটসহ প্রতিপক্ষকে টার্গেট করে রাবার বুলেট ও গুলি বিদ্ধ হয়ে অন্তত ৫ থেকে ৭জন গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রোববার (৮ ও ৯জুন) দুইদিন ব্যাপী সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের বড় আড়িয়া মোহন ও ছোট আড়িয়া মোহন এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টায় বিচারের আশ্বাসে উভয়পক্ষ শান্ত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড় আড়িয়ামোহনের নজরুল ইসলাম (৩০) ও ছোট আড়িয়ামোহনের হিমেল (৩২) এর মধ্যে ঈদ-উল-আযহার দিনে স্থানীয় আড়িয়া মোহন ঈদগাহ মাঠে নামাজে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে হিমেল নজরুলকে আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দিলেও ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে হিমেল ও বহিরাগত লোকজন নিয়ে নজরুল ইসলামসহ বড় হামকুড়িয়া গ্রামের কিছু সংখ্যক লোকজনকে আঘাত করলে বিষয়টি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই দু’গ্রামের লাঠি, বাঁশ ও দেশিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমনে বেঁধে যায়। এ সংঘর্ষে ছোট আড়িয়ামোহন গ্রামের তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় আড়িয়ামোহন গ্রামের ৪-৫জন গুলিবিদ্ধ ও কমপক্ষে ২’শ জন হতাহত হয়ে সদর থানায় চারটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ঘটনার আড়াল করতে ছোট আড়িয়ামোহনের শহিদুল বাদী হয়ে অপর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা যায়।
এ হামলায় বড় আড়িয়ামোহন গ্রামের সুলতানের ছেলে মাহবুবের বসতবাড়িতে আগুনে নগদ টাকা লুটপাট ও আলমারী ভেঙ্গে ২লাখ টাকা, ৫ভরি স্বর্ন, সেলাই মেশিনসহ আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। ইসহাকের পুত্র সোবাহানের খরের পালায় আগুনসহ বসতবাড়িতে ভাঙ্চুর, মৃত মনছের আলীর ছেলে আবুল হাশেমের নগদ ১৫ লাখ টাকা, জমির দলিল, ঘরে থাকা ফ্রিজ ও ৩টি বসতঘরে আগুন, আমজাদ হোসেনের ছেলে আমিরের বসতঘর দরজা ভাঙ্চুর, আফতাব মুন্সির ছেলে বারিক সরকারের বসত ঘর ভাঙ্চুর করে আগুন, বুকে গুলি, তাঁর ছেলে ডাক্তার রুহুল আমিন পায়ে গুলি, আলম সরকারের ছেলে পলাশ সরকারের ঘারে গুলি, মৃত জয়নালের ছেলে শাহ আলী পায়ে গুলি, আব্দুল আলিমের ছেলে রাবার বুলেট আহত মিল্লাত, সাইফুল সরকারের ছেলে শফি সরকারের বসতঘরে ফ্রিজ, ৪০হাজার টাকা খাসি ছাগলকে দাঁ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ও লাখ টাকা দামের ৩টি গরু লুট, মোহাম্মদ মুন্সির ছেলে শফি শেখের ঘরের গ্লাস ১টি ছাগলসহ আসবাবপত্র লুট,শাহাআলীর ছেলে আরিফ ও স্ত্রীর ব্যাগে থাকা গয়নাসহ দুইটা পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন, আফতাব সরকার ছেলে খালেক সরকারের বাড়িঘর ভাঙ্চুর ও আগুন, ইসমাঈল মাষ্টারের ছেলে কবির হোসেনের ফার্মে ভাঙ্চুর, আব্দুল আলিমের ছেলে মনিরুলের মিনি ট্রাক ভাঙ্চুর, ভিতরে থাকা ৩০হাজার টাকা লুট, মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে দুলাল সেখের নতুন ৭৫ হাজার টাকার ভ্যানগাড়ী পোড়ানোসহ কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষ নেতৃত্বদানকারী শহিদুল তাঁর ছেলে হিমেলসহ সহস্রাধিক লোকজন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়। এদিকে বড় আড়িয়ামোহন গ্রামের হাসপাতাল থেকে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তবে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী ও ভুক্তভোগীরা সঠিক বিচার চেয়ে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবী করছেন।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। উভয়পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ১১পদাতিক ডিভিশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগনেরও নজরে রয়েছে।