টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার ধারিয়াল গ্রামে এক মর্মস্পর্শী মানবিক ট্র্যাজেডির চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে গত তিন দশক ধরে লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মো. সাইফুল ইসলাম (৩৭)। একমাত্র আশ্রয় তাঁর মা রহিমা বেগম, যিনি স্বামীহারা হয়েও ভিক্ষা করে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখছেন।
সাইফুলের জন্ম ১৯৮৮ সালে। বাবা বহর আলী মারা যান প্রায় ২০ বছর আগে। ছোটবেলায় তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না—কথা বলায় সমস্যা, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকা ছিল স্বভাব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আচার-আচরণ আরও খারাপ হতে থাকে। কখনো কাউকে কামড়ে দেওয়া, হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া বা রাস্তায় কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ানোর মতো ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় শেষমেশ তাঁর পায়ে পরানো হয় লোহার শিকল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাইফুলকে একটি খুঁটির সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাটিতে বিছানো পাতলা বিছানায় বসে কিংবা শুয়ে থাকেন তিনি। শিকল খুললেই তিনি ছুটে যান অন্যদের দিকে, কামড়াতে চান বলে জানান এলাকাবাসী। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থেই বাধ্য হয়ে তাকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
মা রহিমা বেগম বলেন,
"৭ বছর বয়স থেকে ছেলের আচরণ বদলে যায়। ডাক্তার-কবিরাজ অনেক দেখিয়েছি, কিছুতেই কাজ হয়নি। পাবনায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু একা কিভাবে যাব? ভিক্ষা করেই ছেলেকে খাওয়াই।"
বর্তমানে সরকার থেকে সাইফুলের নামে ২,৫০০ টাকা এবং রহিমা বেগমের নামে ১,৮০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এই সামান্য টাকায় চলে না সংসার, হয় না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। এ যেন শুধুই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম বলেন,
"আমরা যতটা পারি সাহায্য করি। কিন্তু সাইফুলের আচরণ এমন যে শিকল ছাড়া উপায় নেই। তার মা কষ্ট করে দিন পার করছেন।"
ধারিয়াল জামে মসজিদের সেক্রেটারি সুমন আল মামুন বলেন,
"শিকল না দিলে সে শিশুদের তাড়িয়ে বেড়ায়, ঘরের জিনিস ভাঙে। আমরা মাঝে মাঝে সাহায্য করি, কিন্তু স্থায়ী সমাধান দরকার।"
ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকার জানান,
"সাইফুলের জন্য ভাতা চালু করা হয়েছে এবং যতটা সম্ভব সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন,
"ভাতা থাকলেও যদি অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন হয়, প্রশাসন পাশে থাকবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.