
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সুদ ব্যবসায়ীর দায়ের করা মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শরিফুল ইসলাম নামের এক দরিদ্র কৃষক। ন্যায়বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। আতঙ্কে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই কৃষক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চিথুলিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম মৃত আয়নাল হক মন্ডলের ছেলে। আর অভিযুক্ত মোক্তার হোসেন একই গ্রামের মৃত কাশেম সরদারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গত জুন মাসে অসুস্থ পিতার চিকিৎসার জন্য শরিফুল মোক্তারের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা সুদে ধার নেন। এ সময় এনআরবিসি ব্যাংকের তালগাছি সাব ব্রাঞ্চের দুটি চেক বন্ধক দেন তিনি। পরে জমি বিক্রি করে ঋণ শোধের চেষ্টা করলে মোক্তার নিজেই জমি কিনতে আগ্রহী হন। কিন্তু বেশি দাম পাওয়ায় শরিফুল অন্যত্র জমি বিক্রি করেন।
এরপর গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সুদসহ ১ লাখ ৪ হাজার টাকা মোক্তারকে ফেরত দেন শরিফুল। কিন্তু চেক ফেরত না দিয়ে মোক্তার একটি সাদা চেকের ফটোকপি হাতে দেন। সরল বিশ্বাসে শরিফুল তা বুঝতে না পেরে গ্রহণ করেন।
পরে সেই সাদা চেকে ৬ লাখ টাকা বসিয়ে ব্যাংকে জমা দেন মোক্তার হোসেন। চেক ডিজঅনার হওয়ার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী হাবিজা বেগমকে বাদী করে শাহজাদপুর আমলী আদালতে মামলা করেন। অসুস্থতার অজুহাতে ওই মামলায় হাবিজা বেগম পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন ছেলে নয়নকে।
এ ঘটনায় গ্রাম্য শালিসে গ্রামবাসী শরিফুল ইসলামের পক্ষে গণস্বাক্ষর প্রদান করেছেন।
শরিফুল ইসলাম বলেন, “বাবার অসুস্থতার কারণে বাধ্য হয়ে সুদে টাকা নিয়েছিলাম। পরে ফেরতও দিয়েছি। এখন জালিয়াতি করে আমার নামে ৬ লাখ টাকার মামলা করা হয়েছে। আমি পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আদালত ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে মামলার বাদী হাবিজা বেগম বলেন, “শরিফুল আমার বাড়িতে এসে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকের চেক রেখে গেছে।” তবে তার স্বামী মোক্তারকে গ্রামবাসী টাকা ফেরতের প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি স্বীকার করেন যে শরিফুল আলাদাভাবে টাকা ফেরত দিয়েছিল।
এনআরবিসি ব্যাংকের তালগাছি সাব ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “নিয়ম মেনেই শরিফুল ইসলামের চেক ডিজঅনার করা হয়েছে।” তবে মিমাংসার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি ডিজঅনার করা কতটা যৌক্তিক—এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিবেদককে হুমকি দিয়েছেন অভিযুক্ত মোক্তার হোসেন।