
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: দারিদ্রতাকে জয় করে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে হতদরিদ্র রিকশা চালকের মেয়ে চাঁদনী খাতুন(১৮)। তিনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা গ্রামের হতদরিদ্র রিকশা চালক চাঁদ আলী ও ক্যালেন্ডার মিল শ্রমিক সাজেদা খাতুনের বড় মেয়ে। তারা দুই বোন এক ভাই। চাঁদনী ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। চাঁদনী খাতুন ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারের লোকজন সহ এলাকার সবাই অত্যন্ত খুশি।
চাঁদনী খাতুন জানায়, ২০১৬ সালে কাকিলা-মাদলা সকোরি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি পিএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হতে চাইলে তার বাবা চাঁদ আলী দরিদ্রতার কারণে তাকে আর লেখাপড় করাতে রাজি ছিলেন না। অনেকটা জোর করেই চাঁদনী পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ক্লাসে সে ভালো পড়ালেখা পাড়ায় শিক্ষকরা তার প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠেন। অর্থাভাবে যখন তার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পরে তখন তার শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট ফি সহ পড়ার সুযোগ করে দেন। ফলে চাঁদনী সেখান থেকে ২০১৯ সালে জেএসসি ও ২০২২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। চাঁদনী বলেন, বাড়ি থেকে তার স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় ২ কিলোমিটার। রোদ পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে তাকে প্রায়ই পায়ে হেটে স্কুলে যাতায়াত করতে হোতো। তারপরেও সে থেমে জাননি। এসএসসি পাশের পর অর্থাভাবে তার পড়ালেখা আবারও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তার গ্রামের বাসিন্দা ও শাহজাদপুর সরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষক আসমত আলীর সহযোগিতায় ওই কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। সে অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় সেখানেও তার শিক্ষকরা কলেজের বেতন ও প্রাইভেট ফি ফ্রী করে দেন। এরপর তার শিক্ষক ও শুভাকাঙ্খিদের সহযোগিতায় রাজশাহীতে কোচিং করেন এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ৩১৯৯নং মেধা তালিকায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি জানান আবারও সবার সহযোগিতায় তিনি মেডিকেলের পড়ালেখা শেষ করতে চান। চাঁদনী জানায়, তাদেও ৪ শতক বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। ২০২৪ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার বাবা-মা থাকার কষ্ট দূর করতে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে একটি টিনের ঘর দিয়েছেন। সেখানে তারা গাদাগাদি করে থাকেন। চাঁদনী বলেন, আমি ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় রোগীদের সেবা করতে চাই।
চাঁদনীর বাবা চাঁদ আলী বলেন, ওকে কোনো সময় একটু ভালো কিছু খেতে দিতে পারিনি। ভালো জামা কাপড় দিতে পারিনি। ওকে কোনো সখ পূরণ করতে দিতে পারিনি। অর্থাভাবে এক সময় আমি ওকে পড়াতে চাইনি। তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হই রাতে ফিরি। ওর মা সকালে কাজে যায়। ফলে ওকেই রান্না বান্না সহ সংসারের যাবতীয় কাজ করে তারপর পড়ালেখা করতে হয়েছে। তবে ওে শিক্ষকরা ওকে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। আমি তাদেও প্রতি কৃতজ্ঞ। এতো কষ্ট করেও ও এই সাফল্য অর্জন করায় আমি অত্যন্ত খুশি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক আসমত আলী বলেন, চাঁদনী খাতুন অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় আমরা আগ্রহ করেই তাকে আমাদেও কলেজে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেই। এ কলেজের অধ্যক্ষ সহ প্রতিটি শিক্ষক ওর প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তারা ওকে ফ্রীতে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। ওর শিক্ষকরা ওর ব ইপর্যন্ত কিনে দিয়েছেন। তার এই সাফল্যে সত্যি আমরা গর্বিত।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার উচ্চতর গণিত ক্লাসে ওকে খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে দেখে ওর প্রতি নজর বেড়ে যায়। এরপর ক্লাস ও বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে থাকলে তাকে সর্বচ্চ সহযোগিতা করতে থাকি। কলেজের বেতন ও সব শিক্ষকের প্রাইভেট ফি মওকুফ করে দেই। চাঁদনী আমাদের গর্ব। সে ভালো রেজাল্ট করে আমাদের কলেজের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। আমি ওে সর্বাক্ষিন মঙ্গল কামনা করি। তিনি বলেন, চাঁদনীর মেডিকেলে পড়তে আর্থিক সহযোগিতা সহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।