
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: কথা ছিল স্বপ্নের মতো পরম যত্নে লালিত পাকা ধান ঘরে উঠলে ছেলেমেয়ে নিয়ে সারাবছর খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবেন কৃষক মোহাম্মদ আলী। আশা ছিল কয়েক মাসের অকৃত্রিম সাধানা আর অনেক ঘামে তিলতিল করে তৈরি করা সোনালী ধান ঘরে তুলে ফসলের উৎসবে শামিল হবে কৃষক রওশন। কিন্তু কৃষকের সমস্ত স্বপ্ন আকস্মিক বন্যার থৈ থৈ পানিতে তলিয়ে গেছে। উজানে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢল আর অর্তিবর্ষণে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর হুরাসাগর নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নিমাইগাড়া বিলের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধা পাকা বোর ধান গভীর পানির নীচে তলিয়ে গেছে। কোনপ্রকার বাধ না থাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হঠাৎই পানি প্রবেশ করায় বিলের মধ্যেকার পাকা ধান প্রায় তিরিশ ফিট পানির নীচে তলিয়ে যায়।
অপরদিকে বিলের উপরে দিগন্ত জোড়া পাকা ধানের ক্ষেতে বুক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে সব। কারো কারো ধান কেটে মাড়াই করার পর ওখানেই রেখে দেওয়ায় সেগুলোও পানির গভীরে হারিয়ে গেছে। হঠাৎ পানি ঢুকে জমিতে অনেক পানি হওয়ায় কৃষকেরা ধান কাটতে পারেছন না। একদিকে থৈথৈ পানি অন্যদিকে লোকবল না থাকায় কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পানিতেই হাবুডুবু খাচ্ছে। এতে করে দু-একদিন পরে পাকা ধানে পচন ধরে যেতে পারে। যে কারণে কৃষকের ফসলী জমির ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। অথচ এবছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফসল ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে উজানে সৃষ্ট বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল চাপ আর কোনপ্রকার বাঁধ না থাকায় বিনা বাঁধায় চোখের সামনেইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামের হুরাসাগর নদীর তীর ঘেষে বিশাল ফসলের মাঠ হঠাৎ বর্ষার অথৈ পানিতে ডুবে আছে। জমিতে নৌকা নিয়ে ২-৩ ফুট পানির মধ্যে ধান কাটছেন কেউ কেউ। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেতের কাচা ধান পানিতে প্রায় ২-৩ ফুট তলিয়ে যাওয়ায় এবং লোকবল না থাকায় কাটতে পারছেন না। এই বর্ষার ফলে কৃষকের দুই থেকে আড়াই হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এর ফলে কৃষকের প্রায় ২হাজার ৪শত মেট্রিকটন ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম রওশন জানান, এ বার ধান ভালো হওয়ায় আশা করেছিলাম বাম্পার ফসল ঘরে তুলব, কিন্তুু চোখের সামনে সকল ধান পানির নিচে চলে গেলো। তিনি আরও বলেন, আমি ৮ বিঘা ধান বুনেছিলাম। ক্ষেতে ধান পেকেও গিয়েছিল। দুই-এক দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তুলতাম। কিন্তু হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জমির সব ধান গভীর পানির নীচে তলিয়ে গেলো চোখের সামনে।
কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি সারা বছর চলার জন্য ১০ বিঘা জমিতে ধান বুনেছিলেন। কিন্তু পাঁকার আগেই গহীন জলে তলিয়ে গেছে সবুজ ধানের ক্ষেত।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভাষায়, চলতি মৌসুমে ফলন ভাল হওয়ায় স্বপ্ন ছিল বাম্পার ফসন ঘরে তুলবেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে চোখের সামনেই পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অথচ স্থানীয় কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষার জন্য মৌসুমের শুরুতেই একটি অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছিলেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু বারবার ঘুরেও বাঁধ নির্মাণে কোন প্রকার সহযোগিতা না পাওয়ায় এমন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন কৃষকেরা।
এদিকে এই গ্রামের কয়েকশত কৃষকের হাজারো বিঘা ধান পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় গভীর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন সবাই।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন, ‘হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী বছর কৃষকের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।