মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: জুলাই আন্দোলনের শহীদের রক্তের অমর্যাদা হয়, এমন নির্বাচন দেখতে চাই না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ রবিবার দুপুর ১২টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার মিলনায়তনে পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘খুব ভালো একটা নির্বাচন আমরা আশা করি। কেউ নির্বাচনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে শহীদদের প্রতি আমরা ঈমানদারি রক্ষা করতে পারবো না। আমাদের শহীদের রক্তের অমর্যাদা হয়, এমন কোনো নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। শহীদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষা করে খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা প্রত্যাশা করি। নির্বাচনে কোনো দেশেরই হস্তক্ষেপ আমাদের দেশে থাকুক এটা কাম্য নয়। আমরাও কোনো দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমরা সবাইকে বন্ধু হিসাবে দেখতে চাই।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘অতীতে যে যা করেছে তার কিছু পাওনা তারা পেয়েছে আরো পাবে, বাকিটা আখিরাতে পাবে। একটা প্রতিহিংসামুক্ত সমাজ আমরা দেখতে চাই। আমি এই উপজেলার সন্তান, আমার বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের মামলা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তখন আমার সেই বয়স ছিলো না। সেই অর্থে আমি কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এখন যেহেতু আমি জামায়াতে ইসলামীর আমির, তাই আমাকেযুদ্ধাপরাধী বানানোর চেষ্টা হয়েছে। আমি কুলাউড়ার মানুষের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। ওরা যাদের কাছে গেছে, উপযুক্ত জবাব পেয়ে জেনে-শুনেই গেছে। ওরা একবার দুই বার নয়, অনেকবার বৃথা চেষ্টা করেছে। কিন্তু কুলাউড়ার একটা মানুষও খারাপ কোনো কথা বলেনি। আমি এই ঋণ আজীবন শোধ করতে পারবো না। আমার প্রতি যদি এরকম আচরণ করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে কি করা হয়েছে তা এখান থেকেই বুঝা যায়। আমরা এটার কোনো প্রতিশোধ নেব না। কে বা কারা করেছে আমরা সব জানি। প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধ যদি নিতেই থাকি, তাহলে এর কোনো শেষ নেই। এই সমাজ একটা অসুরের সমাজে পরিণত হবে। এমন একটা মানবিক সমাজ আর বানাতে পারবো না। তবে যারা অপরাধ করেছে তাদের ন্যায়বিচার হোক, এই দাবি আমাদের বলিষ্ঠ। এখানে আমরা কোনো ছাড় দেবো না।’
আমিরে জামায়াত আরো বলেন, ‘দেশের মানবসম্পদ আর আল্লাহর দেওয়া সম্পদই যথেষ্ট, বাংলাদেশকে বদলানোর জন্য। আমাদের কুশিক্ষার জায়গায় সুশিক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি শিক্ষার কারিকুলাম ও মডিউল নৈতিকতার ভিত্তিতে হয়, তাহলেই লিক্ষার পরিপূর্ণ পূর্ণতা পাবে। আপসংস্কৃতির কারণে পরিবারের কাঠামো এলোমেলো হয়ে গেছে। একটা মানুষ কিভাবে নিজে বড়লোক হবে, শুধু এটাই শেখানো হয়। ভিক্ষুক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি পর্যন্ত সবাই ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্সের টাকায় কোনো না কোনোভাবে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার ব্যয় করেছে। যারা উচ্চ শিক্ষায় পড়ালেখা করেছে, জাতির টাকা তাদের পেটে ডুকেছে, মগজে ডুকেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট, বালি, পাথরের সঙ্গে এদেশের আঠারো কোটি মানুষ জড়িত। এই শিক্ষাটাই যদি মানুষকে দেওয়া হতো যে তোমাদের বেড়ে উঠার পেছনে সমস্ত মানুষের অবদান। তাদের দান-অনুদানে তুমি আজকে এই জায়গায় এসেছো। যত বড় মেধাবী যতবড় শিক্ষিত ততবেশি তারা জাতির কাছে দায়বদ্ধ। এটাই যদি তাদের মগজে প্রতিষ্ঠা করা যেতো, তাহলে ঘুষ নেওয়ার সময় তাদের হাত থরথর করে কাঁপতো। এই নৈতিক দায়বদ্ধতা যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করতে পারি তাহলে আমাদের শিক্ষিত সমাজ জাতির সম্পদে পরিণত হতো।
বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত এই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আজিজ আহমদ কিবরিয়া, পৌর আমির হাফেজ তাজুল ইসলাম।
পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন-এডভোকেট ছালিক আহমদ চৌধুরী, আনিসুর রহমান, মনির উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ মাসুক উদ্দিন, মো. শফিক উদ্দিন, মোহাম্মদ শামসুল হক, এড. রবিউল ইসলাম, এনামুল ইসলাম, রাজানুর রহিম ইফতেখার, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, উপজেলা সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক প্রমুখ।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.