
বিশেষ প্রতিনিধি: আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি ‘লোটাস কামাল’ নামে পরিচিত, ক্রীড়াজগতের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মালিকানা ছিল তাঁর পরিবারের হাতে। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক অভিযোগে তাঁকে দুর্নীতির ‘অলরাউন্ডার’ হিসেবেও অভিহিত করা হচ্ছে।
পাঁচবার কুমিল্লা-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই সাবেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ২০১৪ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনের সময়কালেই ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার, সরকারি প্রকল্প এবং নিয়োগবাণিজ্যে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন খেলাপি ঋণ বাড়তে দেওয়া হবে না। অথচ তাঁর মেয়াদেই খেলাপি ঋণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। এস আলম গ্রুপের হাতে একাধিক ব্যাংক চলে যাওয়া, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও এমডি নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ এবং সরকারি ব্যাংককে বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, অর্থপাচার ও সম্পদ গোপনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সর্বশেষ হলফনামা অনুযায়ী, লোটাস কামালের নিজস্ব অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা হলেও স্ত্রী কাশমেরী কামালের সম্পদ দেখানো হয়েছে ৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাঁদের পরিবারের নামে শত কোটি টাকার সম্পদ স্থানান্তরের তথ্য রয়েছে সেই হলফনামায়।
তাঁর এলাকা কুমিল্লায় সরকারি প্রকল্প বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়ে নিজের বাড়ির পাশেই শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করান। এ প্রকল্পসহ আরও একটি নলেজ পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ আদায় এবং উপকরণ সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবতায় তেমন সুফল বয়ে আনেনি বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
এছাড়া খাল খনন, টিআর-কাবিখা প্রকল্প, ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং বদলির ক্ষেত্রেও ঘুষ গ্রহণ ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাঁর ভাই গোলাম সারোয়ার, এপিএস কে এম সিংহ রতনসহ ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে তিনি স্বজনদের সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
লোটাস কামালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত সাপেক্ষ হলেও, এ অভিযোগগুলো দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির বিস্তারের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব অভিযোগ দেশের ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।