
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় বুধবার (২ জুলাই) রাতের ঘটনা যেন রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস নাটক। সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা দুই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এ সময় ওসি মিজানুর রহমানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল হঠাৎ থানা চত্বরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে। ইট-পাটকেল ছুড়ে ভেঙে ফেলে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা। পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “সংঘর্ষে গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি নিজেসহ ছয়জন পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, “দুর্বৃত্তরা পুলিশের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাজতখানার তালার চাবি কেড়ে নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে, তবে তাতেও উত্তেজনা বাড়ে। পরে লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
ওসি আরও দাবি করেন, “হামলায় জড়িত অনেককে আমরা শনাক্ত করেছি। তারা স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
পুলিশ সূত্র জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
পুলিশ আরও জানায়, বেলাল ও সোহেল স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা। তাদের মুক্ত করতেই ওয়ালিউর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালায়।
তবে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি থানায় ছিলাম না। আমাদের কোনো নেতাকর্মীও এই ঘটনায় জড়িত নয়। যাদের আটক করা হয়েছে, তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।”
তিনি আরও বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপিকে জড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”
ছিনিয়ে নেওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেলাল হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে এবং সোহেল রানা চপল মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে।”#