নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত অঙ্গনের অনন্য দ্যুতিময় নক্ষত্র, ‘লালন গানের রানী’ খ্যাত ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ৬৯ বছর বয়সী এই গুণী শিল্পী এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, দেশজুড়ে চলছে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর-নাটোর অঞ্চলে জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে হারমোনিয়াম হাতে তুলে নেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে তাঁর সংগীতজীবনের সূচনা।
১৯৭৩ সালে মকসেদ আলী শাহের নির্দেশনায় ফরিদা পারভীন প্রথমবার পরিবেশন করেন কিংবদন্তি ফকির লালন শাহের গান “সত্য বল সুপথে চল”— যা তাঁকে লালন গানের এক অনন্য কণ্ঠ হিসেবে পরিচিতি দেয়।
তিনি “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি”, “তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম”সহ অসংখ্য কালজয়ী লালন সংগীত গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তোলেন। তাঁর কণ্ঠে লালনের দার্শনিক ও মানবতাবাদী দর্শন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বহু দেশে তিনি বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতিনিধি হয়ে গান পরিবেশন করেছেন।
ফরিদা পারভীন ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার অর্জন করেন লালন সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। এর আগে ১৯৮৭ সালে তিনি পান দেশের অন্যতম রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন চলচ্চিত্র ‘অন্ধ প্রেম’-এ শ্রেষ্ঠ নারী প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে।
সংগীত সাধনায় নিবেদিত এ শিল্পী গড়ে তুলেছেন ‘ওচিন পাখি’ নামে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয়—যেখানে লালন সংগীত সংরক্ষণ ও নবীন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৭৬ সালে গীতিকার ও সুরকার আবু জাফরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আবু জাফর ২০২৪ সালে প্রয়াত হন।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে উচ্চারিত লালনের বাণী শুধু সংগীত নয়, হয়ে উঠেছে বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। তাঁর সুস্থতা কামনায় শিল্পী মহলসহ আপামর জনগণ প্রার্থনায় রত।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.