নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আট বছরেও নিজ দেশে ফিরতে পারেনি। বরং সীমান্ত পেরিয়ে নতুন অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি, যা প্রত্যাবাসনকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফেরাতে আজ রোববার কক্সবাজারে শুরু হয়েছে তিন দিনের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন। সম্মেলন শুরুর আগে রাখাইনে সংঘাত বাড়ায় সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা। টেকনাফ সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল।
সীমান্তে সংঘর্ষ, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্কতা
স্থানীয়দের ভাষ্য, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত রাখাইনের কুমিরখালী, শীলখালী ও সাইডং এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে। আতঙ্কে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী অনেকে নিরাপদে সরে এসেছে।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. হোসাইন বলেন, রাখাইনে এখনও নির্যাতন থামেনি। তাই অনেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, শুক্রবার ৬২ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ থেকে বিরত করা হয়েছে। তবে সীমান্তের ওপারে আরও বহু মানুষ অপেক্ষায় রয়েছে। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। দালালচক্র অর্থের বিনিময়ে অনুপ্রবেশ করাতে সক্রিয় থাকায় তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
আট বছরেও ফেরার উপায় নেই
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে। এর পর থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখের বেশি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পে থাকা হাফেজ আহমদ বলেন, তাঁর গ্রাম সিকদারপাড়া এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সেখানে ফেরার পরিবেশ নেই। অপরদিকে নুরুল হাকিম জানান, আরাকান আর্মি শিশুদের জোরপূর্বক কাজে নিয়োগ দিচ্ছে ও চাঁদা দাবি করছে। এসব কারণে পালিয়ে এসেছেন তারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে, তবে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্মেলন
‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক তিন দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী এলাকায় হোটেল বে-ওয়াচে। এতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, কয়েক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ ও বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সম্মেলনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত অন্তত ১০ রাষ্ট্রদূত উপস্থিত থাকবেন। ডিসেম্বর মাসে কাতারের দোহায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কক্সবাজার ও নিউইয়র্কের আলোচনার ভিত্তিতেই দোহা সম্মেলনের অবস্থানপত্র চূড়ান্ত হবে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.