নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল সকাল ১০ টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশ থেকে তৃণমূলের নেতৃত্বকে ডাকা হচ্ছে ঢাকায়। এই বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য হল দলের ভিতর যে বিভক্তি এবং কোন্দল তা বন্ধ করা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকালের এই বর্ধিত সভায় দলের কোন্দল, উপ-দলীয় বিভক্তি বন্ধের জন্য শেষ বার্তা দেবেন। রোববার থেকে আওয়ামী লীগ অ্যাকশনে যাবে এমন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে।
গত দুবছর ধরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল। এর ফলে আওয়ামী লীগের চেন কমান্ড নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অনেক স্থানীয় পর্যায়ের নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। এসবের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু এই ধারা অব্যাহত ছিল।'
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লাহকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল যিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ এবং ত্যাগী নেতা। কিন্তু তার মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হয়েছিলেন। একই সাথে তার মাকেও প্রার্থী করেছিলেন। কিন্তু ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হলেও তার মা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তিনি পরাজিত করেন। নির্বাচনী প্রচারণা করার সময় জাহাঙ্গীরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। একাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু যেই নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের মা জিতেছেন তখনই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বহিষ্কার আদেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরকে আবার আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ফলে একটি বার্তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যদি কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হতে পারে তাহলে তার জন্য শাস্তি হয় না।
একই অবস্থা হয়েছিল বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচনে। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আর গ্রহণ করা হয়নি। ফলে দলের বিরুদ্ধে গেলে, নৌকার বিরুদ্ধে গেলে কিছুই হয়না-এরকম একটি বার্তা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে পৌঁছে যায় এবং সবাই সবাই দলের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নির্বাচনে যাওয়ার এক ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করে।'
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো বর্জন করার ডাক দেয়। আওয়ামী লীগ একটি অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করার কৌশল গ্রহণ করে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী, তাদেরকে স্বাগত জানানো হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ৪৭ ধারাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে থাকা নৌকা প্রতীক না পাওয়া প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং ৫৮ টি আসনে তারা বিজয়ী হয়। কিন্তু এই বিজয় আওয়ামী লীগকে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিভক্তি এবং কলহের দিকে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈতরণী পার হয় বটে কিন্তু আওয়ামী লীগের ভেতর যে বিভক্তি তা প্রবল রূপ ধারণ করে। এই বিভক্তির ঠেকানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার উদ্যোগ নিচ্ছেন। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ বিভক্তি বন্ধ, কোন্দল বন্ধ এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু এতেও এ সমস্ত সহিংসতা বন্ধ হয়নি। এ কারণেই আওয়ামী লীগ আগামীকালের এই বর্ধিত সভা ডেকেছে। এই বর্ধিত সভায় বিভক্তি বন্ধের জন্য শেষ বার্তা দেয়া হবে। যদি এরপরও বিভক্তি বন্ধ না হয় সে ক্ষেত্রে যারা দলের ভেতর কোন্দল সৃষ্টি করছেন, যারা দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। প্রথমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা, যারা বিভক্তির কারণ তাদের পদ-পদবী কেড়ে নেয়া হবে। দ্বিতীয়ত, তাদেরকে বিভিন্ন শান্তিমূলক ব্যবস্থা দেয়া হবে এবং তৃতীয়ত, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে। আর এ প্রক্রিয়া এবং কঠোর অ্যাকশন গ্রহণ করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিভক্তি কমবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।'