
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ভূঁইয়াগাঁতী বাসস্ট্যান্ড এলাকা এখন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে এই এক কিলোমিটার এলাকাতেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৯ জনের, আহত হয়েছেন ১৫ জনেরও বেশি। কারণ একটাই রোড ডিভাইডার নেই, আর পাশ্বরাস্তা বন্ধ।
স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কের ওই অংশে যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাস্তায় কোনো ডিভাইডার না থাকায় দুই দিকের গাড়ি মুখোমুখি চলে আসে। তার ওপর পাশ্বরাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় দক্ষিণ দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে হঠাৎ মাঝরাস্তায় ঘুরতে হয়। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা কখনও ক্ষতি সামান্য, কখনও প্রাণঘাতী।
ছয় মাসে ৯ মৃত্যু, অসংখ্য আহত-
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই এলাকায় সংঘটিত সাতটি বড় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নয়জন। এদের মধ্যে রয়েছেন কলেজছাত্র, মোটরসাইকেল আরোহী, ইজিবাইক চালক, ভ্যানচালক ও পথচারী। এছাড়াও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ভূঁইয়াগাঁতী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থাকা পাশ্বরাস্তা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই দুর্ঘটনার হার বেড়েছে। প্রতিদিনই সকাল-বিকালে গাড়ির জট এবং বিপরীতমুখী যানবাহনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, “এই এলাকায় এখন গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। কখন কে ধাক্কা খাবে বলা যায় না। রোড ডিভাইডার না থাকা মানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা।”
স্থানীয় বাসিন্দা প্রফেসর শংকর কুমার দাস বলেন, “আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে রোড ডিভাইডার স্থাপন ও পাশ্বরাস্তা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে প্রায়ই রক্তে ভিজে যাচ্ছে এই রাস্তা।”
প্রশাসনের নজরেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা-
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে.এম মাসুদ রানা ও সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির বলেন, “ভূঁইয়াগাঁতী এলাকা এখন দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা হিসেবে চিহ্নিত। আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক টহলও বাড়ানো হয়েছে।”
সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো: সরফরাজ হোসাইন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই স্থানে স্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন ও বন্ধ পাশ্বরাস্তা চালু করার পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জায়গা, যে দিন জায়গা ছেড়ে দেবে আমরা সেইদিন থেকেই কাজ শুরু করবো।
নিহত পরিবারের কান্না আর বিক্ষোভ-
গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যের ছেলে আব্দুল মতিন সরকার বলেন, “আমার বাবা সকালে জরুরি কাজে যাচ্ছিল, একটা ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলল। যদি ডিভাইডার এবং পার্শ্বরাস্তা থাকত, হয়তো আমার বাবা আজও বেঁচে থাকত।” তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা আর কোনো মা-বাবাকে এমনভাবে হারাতে চাই না।” এদিকে, দুর্ঘটনা ঠেকাতে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন বুধবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।
‘মৃত্যুর হাইওয়ে’ বলছে স্থানীয়রা-
এলাকার তরুণ সমাজের অনেকে এখন মহাসড়কটিকে ডাকছেন ‘মৃত্যুর হাইওয়ে’ নামে। কারণ, সামান্য ভুলে মৃত্যু আসছে অনিবার্যভাবে। সিরাজগঞ্জ ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র ইকরামুল হক বলেন, “আমরা প্রতিদিন এই রাস্তা ব্যবহার করি। রাস্তা পার হতে গেলেই মনে হয় জানটা হাতের মুঠোয়। প্রশাসনের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা-
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের এই অংশটি এখন সিরাজগঞ্জ জেলার অন্যতম দুর্ঘটনাপ্রবণ পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ভূঁইয়াগাঁতী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পাশ্ব রাস্তার সমস্যা সমাধানের জ্যন জায়গাটি নতুন করে অধিগ্রহণ করতে হবে। নতুন করে জায়গাটি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সহ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশাকরি সওজ বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, “একটা ডিভাইডার ও পার্শ্বরাস্তাই পারে প্রাণ বাঁচাতে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তী দুর্ঘটনায় আরও নিরীহ প্রাণ ঝরে যাবে।”













