
নিজস্ব প্রতিবেদক: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চলতি বছরই উৎপাদনে আসছে। রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত এই কেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ—যা দেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ১৫,৫০০ থেকে ১৬,৫০০ মেগাওয়াট। এ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ভারতের ওপর নির্ভর করছে প্রায় ২,৭৬০ মেগাওয়াট আমদানি করা বিদ্যুতের মাধ্যমে, যা জাতীয় চাহিদার ১৭ শতাংশেরও বেশি। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে এই আমদানি নির্ভরতা প্রকট।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, “রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে ১,২০০ মেগাওয়াট এবং পরে পুরো কেন্দ্রটি চালু হলে ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে জাতীয় গ্রিডে বড় সক্ষমতা যুক্ত হবে। উত্তরাঞ্চলে এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে আমদানিনির্ভরতার বিকল্প তৈরি হবে এবং গ্যাস ও তেলভিত্তিক কেন্দ্রের ওপর চাপ কমবে।”
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ পিএলসি (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর থেকে বগুড়া, গোপালগঞ্জ, কালিয়াকৈর ও বাঘাবাড়ী পর্যন্ত চারটি ৪০০ কেভি উচ্চক্ষমতার সঞ্চালন লাইন ইতোমধ্যেই নির্মিত ও সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে ওইসব অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। এছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট এবং সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আরও ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। আদানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক ও বকেয়া অর্থসংক্রান্ত সমস্যাও।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম জানান, “রূপপুরের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে, তা বগুড়া ও গোপালগঞ্জসহ প্রয়োজনীয় এলাকায় সরবরাহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা এই বিদ্যুৎ গ্রহণে পুরোপুরি প্রস্তুত।”
রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাসান বলেন, “ইউনিট-১ চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফুয়েল লোডিংয়ের পূর্বপ্রস্তুতি চলছে এবং ৩৬৩ জন দক্ষ জনবল তৈরি করা হয়েছে।”
রাশিয়ার অর্থায়নে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে রয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটম। যদিও প্রকল্প ব্যয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তবু সরকারের প্রত্যাশা, রূপপুর চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আসবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “আমরা রূপপুরকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের সরাসরি বিকল্প হিসেবে না দেখলেও তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলোকে সরিয়ে দিয়ে ব্যয় কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।”
চলতি বছরের মধ্যেই রূপপুরের প্রথম ইউনিট চালুর লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে সরকার। সফল বাস্তবায়ন হলে, এটি দেশের বিদ্যুৎ খাতে আমূল পরিবর্তন আনবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।