রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই কয়েকটি চালকল মালিকের সরকারি ধান–চাল বরাদ্দ নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে—এমন অভিযোগে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বৈধ লাইসেন্সধারী মিল মালিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী বৈধ ও সময়মতো নবায়নকৃত লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালকল সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে না। কিন্তু সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ, অপরিশোধিত এবং আংশিক কাগজপত্রযুক্ত কয়েকজন মিল মালিক তদবিরের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নিয়ম মেনে লাইসেন্স নবায়ন করা মিলগুলো বরাদ্দ বঞ্চনার আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদের অভিযোগ—কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি লাইসেন্স হালনাগাদ না করেই প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বরাদ্দ নিতে চাইছেন, যা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও আইনগত প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে বছরে লাইসেন্স নবায়ন করি। এখন যদি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারীরাও বরাদ্দ পায়, তাহলে আইন মানার কোনো মূল্যই থাকে না। এতে বিনিয়োগ ও পরিশ্রম—সবই ঝুঁকিতে পড়ে যায়।”
তারা আরও অভিযোগ করেন, চান্দাইকোনায় দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত পরিবেশ বিধ্বংসী ও ফসলি জমি বিনষ্টকারী অবৈধ রিয়া অটো-রাইস মিলসহ আরও কয়েকটি চালকল কোটি কোটি টাকার সরকারি ধান–চাল বরাদ্দ নেয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে তৎপর। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কেউ কোনোভাবেই বরাদ্দ পাবে না। সব মিলের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই চলছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, “চালকল বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা অবৈধ প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। প্রতিটি মিলের লাইসেন্স, সক্ষমতা, পূর্বের কর্মসম্পাদন ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই করেই বরাদ্দ দেওয়া হবে। কেউ অবৈধভাবে বরাদ্দ নিতে চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন—“স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জেলা খাদ্য দপ্তর সর্বোচ্চ নজরদারিতে রয়েছে।”
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি—রায়গঞ্জে কয়েকজন ব্যক্তি একজনের নামে একাধিক ভুয়া লাইসেন্স তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
তাদের মতে, “এ ধরনের জালিয়াতি শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং বাজারব্যবস্থা, কৃষকের স্বার্থ ও সরকারি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি।”
সচেতন মহল মনে করছেন, বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কঠোরতা বজায় রাখা না গেলে—সৎ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সরকারি খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় অনিয়ম বাড়বে সেই সাথে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে বাধাগ্রস্ত হবে। এ নিয়ে বর্তমানে রায়গঞ্জ উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.