
নিজস্ব প্রতিবেদক: ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মূল দাবি—জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালু এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামী দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রদর্শনের লক্ষ্যেই এ কর্মসূচি নিয়েছে। তবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশঙ্কা, এসব কর্মসূচি রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, “দাবিগুলোতে সমঝোতা না হলে দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি হবে, যা সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী নেতারা বলছেন, জনমত সুদৃঢ় করতেই এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “এটি স্ববিরোধী নয়, বরং ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।”
অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, কমিশনের আলোচনার সময় রাজপথে কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধী। তবে তারা স্বীকার করছে, কর্মসূচি দেওয়া প্রতিটি দলের গণতান্ত্রিক অধিকার।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকেও যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, সমঝোতা না হলে অবরোধ বা সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সীমানা পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে পুলিশ বলেছে, আন্দোলনের আড়ালে ‘ফ্যাসিস্টদের’ সহিংসতা ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, ইসলামী দলগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জনের পর নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, সহিংসতার মাধ্যমে তারা শেষ পর্যন্ত নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “প্রতিটি দলের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে, তবে নির্বাচন ও সুষ্ঠু পরিবেশকে ব্যাহত করে এমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণযোগ্য নয়।”
বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতারা একমত—যে কোনো কর্মসূচি যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনে, তবে দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও জনগণের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশের স্বার্থে দায়িত্বশীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।