
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তার মূল উৎস আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী দুই ভাইয়ের বিরোধ বলে অনেকে মনে করছেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে তার বড় ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের বিরোধ এখন রাজনীতির মাঠে ব্যাপকভাবে আলোচিত। এই দুই ভাইয়ের বিরোধ আওয়ামী লীগের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয় এবং এর ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরশ বা তাপস রাজনীতিতে কোন অপরিচিত মুখ নন, বরং তারা শেখ মুনির সন্তান হিসাবে রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী। শেখ মনি পরিবার এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং তাদের অবস্থান আওয়ামী লীগের মধ্যে অত্যন্ত দৃঢ়। এই প্রভাবশালী পরিবারের ভিতরে গৃহদাহ আওয়ামী লীগের জন্য এক বড় ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। আর এ কারণেই এই বিরোধ দ্রুত মেটানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে রাজনীতিতে ভ্রাতৃবিরোধ এটাই নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে দুই ভাইয়ের প্রকাশ্য বিরোধ দেখা গেছে এবং এই বিরোধের পরিণাম হচ্ছে বেশ আতঙ্কের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত ভ্রাতৃবিরোধ গুলোর মধ্যে তাপস-পরশের বিরোধ হল সর্বশেষ। এর আগে যে বিরোধগুলো রাজনীতিতে আলোচিত ছিল তার মধ্যে আছে মইনুল হোসেন-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ইত্তেফাক এর প্রতিষ্ঠাতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার দুই পুত্র বয়স প্রয়াত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। দুই ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে। প্রকাশ্যে একে অন্যকে গালাগাল করতেন। দুজনের চিন্তা ধ্যান ধারণা এবং রাজনৈতিক কৌশলও ছিল ভিন্ন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন চতুর্থ সংশোধনী করেন তখন তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুরও রাজনৈতিক জীবন সুবিধাবাদে আচ্ছন্ন। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানে তিনি গিয়ে ক্ষমতার হালুয়া রুটি খেয়েছেন। কখনও জাতীয় পার্টিতে, কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে চারপাশে থেকেছেন। এবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছাড়া তার সুবিধাবাদী রাজনীতিতে তেমন কোন বড় ধরনের বিপর্যয় হয়নি। তবে তারা দুই ভাই পরস্পরকে অসম্মান সূচক ভাষায় কথাবার্তা বলতেন প্রকাশ্যে।
মোহাম্মদ নাসিম এবং মোহাম্মদ সেলিম: আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। মনসুর আলীর পুত্রদের মধ্যে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতিতে আলোচিত ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ নাসিমের বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিমও রাজনীতিতে আসার জন্য চেষ্টা করেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। মোহাম্মদ নাসিম এবং মোহাম্মদ সেলিম এর বিরোধী তেমন প্রকাশ্য নয়। তবে একটি চাপা বিরোধ সবসময় তাদের মধ্যে প্রবাহমান ছিল।’
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং লতিফ সিদ্দিকী: বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং লতিফ সিদ্দিকী মধ্যেও এক সময় বিরোধ ছিল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রকাশ্যে তার ভাই লতিফ সিদ্দিকীর প্রকাশ্য সমালোচনা করতেন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী যখন ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়ে যান, তাকে যখন মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়, জেলে যেতে হয় তখন কাদের সিদ্দিকী ঠিকই পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুই ভাইয়ের বিরোধটি অনেকটা আবেগতাড়িত। এখন আবার দুই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। এরকম আরও কিছু বিরোধ রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় আলোচিত ছিল।