নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তি উত্থানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একাংশ। বিভিন্ন সময় থেমে থেমে এই প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনের আগে আগে এই ধরনের উদ্যোগ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
তবে এবার নির্বাচনের পরপরই রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই তৎপরতার অংশ হিসাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রেখেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শুধু তাই নয়, পাশাপাশি এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন কঠোর সরকার বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে একটি শক্তিকে একীভূত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বারিধারার কূটনৈতিক পাড়া।
উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে এবং আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকার পেছনে একটি বড় যুক্তি মনে করা হচ্ছে নেতৃত্বের শূন্যতা। শেখ হাসিনা ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোন দলে কোনও নেতা নেই। এটি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই রাজনীতিতে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
পশ্চিমা দেশগুলো এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগে একটি কর্তৃত্ববাদী মনোভাব তৈরি হয়েছে, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা জাঁকিয়ে বসেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ দরকার।
আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের প্রথম আপত্তি হল বিএনপিতে নেতৃত্ব শূণ্যতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিতর্কিত ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিএনপির রাজনৈতিক ধরন, মুক্ত চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি এবং প্রগতিশীল ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
জাতীয় পার্টি স্বৈরাচারী এরশাদের গর্ভজাত একটি রাজনৈতিক দল যে রাজনৈতিক দলের আদর্শ বলে কিছু নেই। কাজেই এটিও আওয়ামী লীগের বিকল্প হতে পারে না।
এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যারা স্বনামধন্য, যাদের ভালো ইমেজ রয়েছে এবং যারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আস্থাভাজন এরকম ব্যক্তিদেরকে নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ বা মোর্চার প্রক্রিয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। এবং সুশীল সমাজ তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রকম একটি রাজনৈতিক দলকে বিবেচনা করতে চাই। যেমনটি ড. ইউনূস ২০০৬ সালে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সে রকম একটি উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুশীলদের আগ্রহ রয়েছে।’
তবে, সুশীলরা নিজেরা যেহেতু জনবিচ্ছিন্ন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে এজন্য তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করতে চাচ্ছে। এসমস্ত বলয়ে সেসব নেতারাই থাকবেন যাদের রাজনৈতিক ইমেজ জনগণের কাছে ভালো। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি চেয়ারপার্সন জিএম কাদের, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বেশ কিছু নেতা রয়েছেন।
মূলত, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির কিছু নেতা, প্রগতিশীল বামদের কিছু নেতাকে নিয়ে এরকম একটা মেরুকরণের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। তবে, বাংলাদেশে এ ধরনের তৃতীয় শক্তি গঠনের চেষ্টা অনেক পুরোনো। এর আগেও বহুবার এরকম উদ্যোগ হয়েছে। কিন্তু তা বিফলে গেছে। এবারও এটি কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে।’
