রাজনীতিকে ‘সার্কাসে’ পরিণত করেছে টকশোগুলো

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: খেলা হবে’ বলে রাজনীতিকরা যে ‘অশ্লীল’ হাঁকডাক দেন, সেসব খেলার বেশিরভাগের মাঠ মূলত টিভির টকশোগুলো। ‘ধাড়ী’ টকাররা (সম্পাদকরাও!) অনএয়ারের আগেই সঞ্চালকদের কানে কানে বলেন, “খেলা আজ কোন দিকে? বল কার কোর্টে যাবে?” সঞ্চালকরা খেলার গতিপ্রকৃতি, ফলাফল জানিয়েই ফুঁ দেন বাঁশিতে। টিআরপির দিকে ‘শকুনের চোখে’ চরম মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকেন প্রডিউসাররা।

স্ব-স্ব রাজনৈতিক দলের ন্যারেটিভের পক্ষে-বিপক্ষের আলোচনা ক্রমে যুক্তি, পাল্টাযুক্তির গণ্ডি পেরিয়ে তর্কবিতর্ক থেকে বাকযুদ্ধ, অবশেষে মল্লযুদ্ধে রূপ নেয়। ক্যামেরার পেছনে তখন তুমুল উত্তেজনা, হাততালি। টিআরপির পারদ লাফাতে শুরু করে। ভিউ বাড়তে বাড়তে অবশেষে ভাইরাল। আর ভাইরালে ভাইরালে বেড়ে যায় চ্যানেলের ব্র্যান্ড ভ্যালু।

দেশের কয়েক ডজন টিভি চ্যানেল গত কয়েক দশকে একই ফর্মুলায় হাজার হাজার, লাখ লাখ টকশো উৎপাদন ও বিক্রি করেছে, করছে। ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে টকারদের আয়ও বেড়েছে বহুগুণ। সঞ্চালনায় যুক্ত হয়েছে দারুণ গ্ল্যামার। কোনো কোনো সঞ্চালক আবার রাজনীতিকদের অসাধারণ মেধার প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছেন তাদের নাচ-গান-নাটকের মহড়া।

ফলে ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকা আমজনতার কাছে দিনে দিনে রাজনীতি হয়ে উঠেছে ‘সার্কাস’। রাজনীতিকরা পরিণত হয়েছেন এক একজন ‘জোকারে’। এত এত আয়োজনের পরেও দেশে রাজনীতির গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি টকশোগুলো। নব্বই দশকের বড় ধাক্কার পরও গণতন্ত্র ফেরেনি দলীয় রাজনীতিতে।

বরং ‘বখে যাওয়া রাজনীতি’ আর ‘লিপসার্ভিসের’ নেতারা টকশোর মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘স্পেশাল এন্টারটেইনমেন্ট’। কুড়িয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের চরম ঘৃণা আর উপেক্ষা। বোদ্ধারা হয়তো বলবেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব রাজনীতির ফ্যাক্ট তুলে ধরা, গণতান্ত্রিকভাবে শুদ্ধ করে তোলার দায়িত্ব নয়। তাহলে প্রশ্ন, “হৃদয়ে বাংলাদেশ”, “অবিরাম বাংলার মুখ”, “সময়ের প্রয়োজনে সময়”, “সংবাদ নয় সংযোগ”- অসাধারণ এসব স্লোগানের শানে নুযুল কী?

প্রথাবিরোধী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, “টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিসের এক নম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।” তিনি আরও বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমণ্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।”

কয়েক দশক আগের সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা কতটা এগিয়েছি? যদি বলতে পারতাম, “টকশোর মাধ্যমে হিংসা, প্রতিহিংসা, বিভেদ ভুলে দেশে রাজনীতির গুণগত মানে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি রুচিশীল, উদার, গণতন্ত্রমনা, সহনশীল, অহিংস হয়েছে। সত্যি দারুণ স্বস্তি হতো।

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের ডিজিকে অবরুদ্ধ করে রাখলেন কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আউটসোর্সিংয়ের ৩১৪ পদের নিয়োগ আটকে থাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি)। খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে অধিদপ্তরের

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় লোডশেডিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বাসভবন এলাকায় লোডশেডিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৯ মে’)

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা ঘোষণা নাহিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ সরকারের কাছে তিন দফা ঘোষণা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেইজে তিনি এ

প্রেমের টানে হিন্দু তরুণী প্রেমিকের বাড়ি, অতঃপর বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেমের টানে জীবন সঙ্গি করতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শেরপুরে মুন্সিগঞ্জের এক হিন্দু তরুণী। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি)। শেরপুরে আসা ২৭ বছর বয়সী ওই হিন্দু

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে স্ত্রী কে গলা কেটে হত্যা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম (১৯) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী হাসিবুলের বিরুদ্ধে। শনিবার (৭

‘বাংলা ব্লকেড’ এর ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক ঘণ্টা অবস্থানের পর রাজধানীর শাহবাগের মোড় থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে স্বাভাবিক হয়েছে যান চলাচল। তবে, অবরোধ প্রত্যাহার করলেও