
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করে একাধিক স্থাপনায় আঘাত আনতে সক্ষম হয়েছে ইরান। দুর্ভেদ্য এই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে গেছে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের কাছে।কীভাবে এই ‘অভেদ্য’ ব্যবস্থাকে হার মানিয়েছে ইরান, জানিয়েছে তাদের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ‘ট্রু প্রমিজ-৩’ অভিযানে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ ও বিমান শাখা ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের দখলকৃত ভূমির গভীরে আঘাত হানছে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা কৌশলকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করেছে এবং তেল আবিবকে হতবাক ও আতঙ্কিত করে তুলেছে।,
পার্স টুডে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ ও বিমান শাখা শনিবার রাতে অভিযানের নতুন পর্যায় শুরু করে, যার কোডনাম ছিল ‘ইয়া আলী ইবনে আবি তালিব’। এই অভিযানে ব্যাপক ও সমন্বিতভাবে ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। এই অভিযানটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোনের সমন্বয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে।
ফার্স নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী-এই অভিযানে ‘ইমাদ’, ‘গাদর’ ও ‘খায়বার শেকান’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়—যার লক্ষ্য ছিল হাইফা, তেল আবিব ও ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল। ইসরায়েলের শোধনাগার, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র এবং বিমান বাহিনীর জ্বালানি সরবরাহ স্থাপনাগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করাই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নির্ভুলতা এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতাকে প্রমাণ করে।
ইসরায়েলি মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি এই অভিযানে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। দখলকৃত ভূমির উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে প্রকাশিত ছবিগুলোতে ব্যাপক বিস্ফোরণ, হাইফার তেল স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ দেখা যায়।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য:
১. ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইমাদ’ এই অভিযানে মূল ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লাবিশিষ্ট এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘কাদর’ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে উন্নত করা হয়েছে এবং এটি আঘাত হানার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ওয়ারহেড দিয়ে সজ্জিত যা ম্যানুভারিং ফিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের উচ্চ নির্ভুলতা হাইফার কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুগুলিকে সফলভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে।
২. কাদর ক্ষেপণাস্ত্র: ‘কাদর’ ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি ভিন্ন মডেলে ১,৩৫০ থেকে ১,৯৫০ কিলোমিটার পাল্লায় তৈরি করা হয়েছে। এটি আবারও তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। উন্নত জাইরোস্কোপিক নির্দেশন ব্যবস্থা এবং তরল জ্বালানি ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত্রুর প্রতিরক্ষা ও লজিস্টিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।,
৩. খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র: উন্নত ‘খাইবার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার গত রাতের অভিযানকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে উন্মোচন করা হয়েছিল। এর বিশেষভাবে ডিজাইন করা তিন-শঙ্কুযুক্ত ওয়ারহেড বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় উচ্চ মাত্রার ম্যানুভারিং ক্ষমতা প্রদান করে। এটি বিশেষভাবে ‘ডেভিড’স স্লিং’ এবং ‘প্যাট্রিয়ট’ এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ছোট ও হালকা গঠনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি বেসামরিক যান বা স্টেলথ লঞ্চার থেকেও নিক্ষেপযোগ্য।,