জেমস আব্দুর রহিম রানা: বিদ্যুৎলাইন কেটে দেওয়ার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ রেখেছে যশোর পৌরসভার হরিজনরা। পৌরসভা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখায় শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ জমা হয়েছে। পশু-পাখি ময়লা হাঁচড়ানোয় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পথচারীদের মুখে কাঁপড় দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যশোর পৌরসভার রেল স্টেশন হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয় এবং গতকাল সোমবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। একারণে যশোর পৌরসভার তিন হরিজন কোলনির হরিজনরা কাজ বন্ধ রেখেছে। বিদ্যুৎ লাইন জুড়ে না দিলে কঠোর কমসূচি গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন পৌরসভার হরিজন সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দ।
সোমবার শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ময়লা স্তূপ তৈরি হয়েছে। কুকুর, বিড়াল, পাখি পা দিয়ে হাঁচড়িয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারিরা মুখ চেপে চলাচল করছে।
শহরের রেলগেট তেতুল মোড় এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় পশু-পাখিতে এসব ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।
অপর বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ছড়ানো ছিটানো আছে। এসব ময়লা না নিয়ে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছাড়চ্ছে। এ কারণে শহরে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। পৌরসভার সঙ্গে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের যে সমস্যা আছে তা সমাধান হওয়া জরুরি।
যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার বলেন, বর্তমান মেয়র আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে রেল স্টেশন এলাকার হরিজন কলোনির বিদ্যুৎয়ের লাইন গত দুইদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। তার প্রতিবাদে আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পৌরসভার সকল পরিচ্ছন্নের কাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা নিজের আলোচনা করেছি। আজ থেকে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।
যশোর পৌরসভা হরিজন সমিতির সভাপতি মতি লাল বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে তাদের বাপ দাদারা বসবাস করে আসছেন। তবে কখনও তাদের বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়নি। প্রিপেইড মিটার দেওয়ার মানে তাদের বিদ্যুৎ বিল আগে দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। পৌরসভা তাদের মাত্র ৩ হাজার টাকা করে বেতন দেয়। তা দিয়ে কী হয়। বছরের পর বছর পৌরকর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে তামাশা করে আসছে। বেতন ভাতা না বাড়িয়ে বিদ্যুৎ বিল তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা বড় অমানবিক বিষয়। শুনছি কয়েক কোটি টাকার বকেয়া বিল চাপবে। এটাতে আমরা শঙ্কিত। বিল দিলে দেবে পৌরসভা। এ নিয়ে কয়েকবার পৌর মেয়রের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এখানে প্রিপেইড মিটার লাগানো যাবে না, সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা যাবে না।
যশোর ওজোপাডিকোর অভিযানিক অফিসার সহকারী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা কিরণ জানিয়েছেন, পৌরসভা দিনের পর দিন বিল পরিশোধের নামে তালবাহানা করে চলেছে। বিশেষ করে হরিজন পল্লির ৩টি মিটারের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে পৌরকর্তৃপক্ষ। সময় নিলেও কার্যকর করছে না। আর হরিজনদের মুখোমুখি করছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, পৌরসভার কোনো কোনো এলাকায় এনজিও কর্মীরা কাজ করে আবার কোনো কোনো এলাকায় পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ করে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যে এলাকায় কাজ করে। এদের কিছু পরিচ্ছন্ন কর্মী স্ট্রাইক করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন তারা পৌরসভার বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে ফ্রিজ, এসিসহ সকল ইলেকটিক্স যন্ত্র চালায় কোনো বিল না দিয়ে। এই কারণে পিডিবির কাছে পৌরসভা কোটি কোটি টাকা দেনা হয়ে গেছে। আমরা এ টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। আমাদের রোডের লাইনও কেটে দিয়েছিল কিন্ত পরে আমরা এটা প্রিপেইড মিটার করে নিয়েছি ও বাকি সব বিল প্রতিমাসে দুই মাসের করে পরিশোধ করে দেব। এটা সেভাবে শোধ হচ্ছে। তবে হরিজন কলোনির বিদ্যুৎ বিল আমরা পরিশোধ করিনি। ওদের বিদ্যুৎ তো পৌরসভার কোনো কাজে লাগছে না। তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে।
তিনি আরও বলেন, তিনটে কলোনির বিল বাকী শুধু সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। তাদের এ টাকা পৌরসভা পরিশোধ করবে না। তারা বলেছে, ওদের দাবি না মানলে তারা ডাস্টবিনের ময়লা নেবে না ও রাস্তা ঝাড়ু দেবে না। এখন তারা যাই করুক তাদের সঙ্গে কোনো আপোষ যাওয়া হবে না। আমরা নিজেরা সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.