জেমস আব্দুর রহিম রানা: অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে অভিযান চললেও যশোরে স্বাস্থ্য বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে অর্ধশত অনিবন্ধিত ক্লিনিক। নানা কৌশল আর ‘উপরমহলের’ কর্তাদের খুশি করে এসব প্রতিষ্ঠান চলে বলেও প্রচার রয়েছে হাসপাতাল পাড়ায়। এদিকে, অভিযানের ভয়ে ফাইল নিয়ে সিলিভ সার্জন অফিস ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে একাধিক ক্লিনিক মালিককে। তবে, সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলছেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ সব সময় জিরো টলারেন্সে থাকবে।
সরেজমিন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যেয়ে দেখা যায়, সদর ও আট উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা কাগজপত্র হাতে নিয়ে বসে আছেন। তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রাশাসনিক কর্মকর্তা ও বড় বাবু। সারাদিন তারা বিভিন্ন তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, যশোর জেলায় মোট ৩০৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ক্লিনিক ১২০টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৮৯টি। খাতা কলমের বাইরে জেলায় আরও অর্ধশত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। সেখানে পুরোপুরি অবৈধভাবে কার্যক্রম চলে আসছে। চলমান অভিযানে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে যশোর শহরে পাঁচ, খাজুরাতে এক, ঝিকরগাছায় তিন, মণিরামপুরে তিন, বাঘারপাড়ায় দুই ও চৌগাছার চার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার রুপদিয়া বাজারে নামসর্বস্ব এশিয়ান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে এক প্রতিষ্ঠান অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ফারিয়া বেগম (২২) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ সময় গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশ হলে ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। খাতা কলমে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বহাল তবিয়তে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এখানে এক চিকিৎসক যশোর জেনারেল হাসপাতালের ‘অনারারি মেডিকেল অফিসার’ ডিগ্রি হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এটি কোনো ডিগ্রি নয়, এটি মূলত একটি মেডিকেল শর্টকোর্স।
অপরদিকে, ঝিকরগাছা উপজেলার ছুটিপুরে সীমান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ছাড়াই হয় রোগীদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা। এমনি নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০২২ সালের ৩০ মে সিভিল সার্জন অফিসের একটি টিম সীমান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ ঘোষণা করে। এখনো পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য আবেদন করেনি। সিভিল সার্জনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোপ জেল রোডে হলি ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক চলছে নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে। সম্প্রতি ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে সিলড করেন। পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের ডাক্তার সেলিম রেজা সেখানে সেবা দিবেন মর্মে আবারও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালুর আনুমতি দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ডাক্তার সেলিম রেজা প্রতিমাসে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তেলন করলেও তিনি উপস্থিত থাকেন না।
খাজুরা প্রতিনিধি জানান, মা জেনারেল স্বাস্থ্য বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করলেও কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। একইসাথে খাজুরা বাজারে অবস্থিত নিউ মাতৃসেবা হাসপাতালের কার্যক্রম বহু আগেই বন্ধ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বর্তমানে খাজুরা ক্লিনিক নামে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। নিয়মিত প্যাথলজি ও অপারেশন কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে। ১৮ জানুয়ারি খাজুরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। যার নেতৃত্ব দেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার রেহেনেওয়াজ রনি। অভিযান চলাকালীন খাজুরা ক্লিনিক তালা মেরে পালিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। অভিযান শেষে আবারও কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডেপুটি সিভিল সার্জান নাজমুল সাদিক রাসেল জানান, যাদের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত সরকারি টাকা পরিশোধ আছে তারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবেন। এর বাইরে কেউ প্রতিষ্ঠান চালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারি নিয়মের বাইরে প্রতিষ্ঠান চালাবার কোনো সুযোগ নেই।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.