আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে মেয়েটির ক্ষত বিখ্যাত মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা প্রধান সন্দেহভাজন সৎ মা নার্গিস বেগম, সৎ নানী ও বাবা শাহীন তরফদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে।
জানাযায়, বেনাপোলের পোড়াবাড়ীর শাহীন তরফদার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নার্গিসকে বিয়ে করেন। তিনি বেনাপোল থেকে যশোর রেল গেটে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। অন্যদিকে, শিশু কন্যা জোনাকি থাকতো তার দাদা-দাদির কাছে। পাঁচ দিন আগে শিশু কন্যা জোনাকি বাবাকে দেখতে রেল গেটের ভাড়া বাড়িতে আসে। সোমবার তার সৎ মা প্রচার দেয় আমাদের জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছে না। এনিয়ে প্রতিবেশিদের মধ্যে নানা কানা-ঘুষা চলছিলো। শেষ পর্যন্ত আজ সকালে পাওয়া গেল তার লাশ। এ বিষয়ে পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে।
নিহতের ভাই তাওহিদ হোসেন চয়ন জানায়, আমরা তিন বোন আর এক ভাই। পাঁচ বছর আগে আমার মায়ের সাথে আমার বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমার মা এখন তুরস্ক আছে। বাবা সৎ মা নার্গিস বেগমকে নিয়ে রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে ভাড়া বাসায় থাকে। গত পাঁচদিন আগে বোন জোনাকি বেনাপোল পোড়াবাড়ি থেকে বাবার বাসায় রেলগেটে আসে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে থেকে বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এরপর ডিবি পুলিশকে জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। মঙ্গলবার বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর পাড় থেকে বোনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার সৎ মার সাথে আমাদের বনিবনা হচ্ছিলো না। আমার ধারণা আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। এবং ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে আমার সৎ মা জড়িত।
নিহতের দাদি সুখবানু বলেন, আমার ছেলে শাহিন দ্বিতীয় বিয়ে করে যশোর রেলগেটে থাকে। গত ৬ দিন আগে আমার পুতনি আমার ছেলে শাহিনের কাছে বেড়াতে আসেন। গতকাল বেলা বারোটার দিকে জানতে পারি জোনাকিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাথে সাথে বাড়ি থেকে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যশোর পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর ২ টা বেজে যায়। এরপর আশেপাশের ডুবা নালা সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে লোকজন এসে বলে জোনাকির মৃতদেহ পাশের ডোবার ভার্সছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন পরিকল্পিতভাবে জোনাকিকে আশেপাশের কোথাও হত্যা করে এখানে মৃতদেহ ফেলে রেখে গেছে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
প্রতিবেশী হনূফা জানান, গতকাল সকালে দেখছিলাম তার বাবার সঙ্গে যেতে। এরপর থেকে আর তাকে দেখিনি। ধারণা করা হচ্ছে আশেপাশে তাকে হত্যা করে মৃত্যুদেহটি ডোবার এক হাত পানিতে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশী নাজমা বলেন, গত সোমবার দুপুরের পরে জানতে পারি জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আজ দুপুরে তার মৃত্যু দেহটি বাড়ির পাশের একটি ডুবার এক হাত পানিতে ভাসতে দেখি। অতটুকু পানিতে একটা নয় দশ বছরের কিশোরী মেয়ে ডুবে মারা যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাছাড়া জোনাকি সাঁতারও জানতো। আশেপাশের কোন জায়গায় তাকে হত্যা করে মৃত্যু দেহ ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে বলে জানান এ নারী।
বিষয়টি নিয়ে যশোর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে সংযোগ দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সৎ মা’ এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় সৎ মা’ নার্গিস ও তার মাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া এ ঘটনায় থানায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি। থানায় মামলা দায়ের হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।