জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: প্রমত্তা যমুনা নদীর বুকে নির্মিত দেশের বৃহত্তর যমুনা রেল সেতুতে রবিবার (৫ জানুয়ারি) পূর্ণগতিতে ট্রায়াল ট্রেনের (পরীক্ষামূলক) টেস্ট রান আপ ও ডাউন লাইন চলাচল শুরু হয়েছে। রবিবার ও আগামিকাল সোমবার পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে দুটি ট্রায়াল ট্রেনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ টেস্ট রান চলবে। চলতি মাসের শেষে বা আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মেধা, শ্রম ও প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারায় উছ্বাসিত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, রবিবার সকাল সোয়া ৯ টার কিছু সময় পর হুইসেল বাজিয়ে চারটি কোচ ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে একযোগ রেল সেতুতে ট্রেন চালানো শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর দুপাশ থেকে দুটি ট্রেন পারাপারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।
যমুনার ওপর নির্মিত যমুনা রেলওয়ে সেতুর চিফ সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, রবিবার পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ণগতিতে ট্রেন চলছে। এর অংশ হিসেবে প্রথমে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে দুটি ট্রেন সেতুর পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে ও পশ্চিম পাড় থেকে পূর্ব পাড়ে ছেড়ে যায়। এরপর ১০টা ২০ মিনিটের দিকে দ্বিতীয়বার ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে দুই পাশ থেকে দুটি ট্রেন সেতু অতিক্রম করে। এরপর ১১টা ০১ মিনিটে একটি ট্রেন সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে ঘণ্টায় ৮০ কিলামিটার গতিতে সেতুতে ওঠে ও ১১টা ০৫ মিনিটে পূর্ব পাড় থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি পশ্চিম পাড়ের সেতুর শেষ অংশ অতিক্রম করে। এর কিছু সময় পর আরকটি ট্রেন ঘণ্টায় ৯০ কিলামিটার গতিত সেতু পার হয়। এভাবে ঘণ্টায় সর্বাচ্চ ১২০ কিলামিটার গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়ে।
স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানায়, সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর উভয়প্রান্তের স্টেশন রেল ক্রসিং এর সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যর গতি আরও বাড়বে।
যমুনা রেল সেতুর (পূর্বনাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু) প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, রবিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে একই সাথে আপ ও ডাউন লাইন থেকে টেস্ট রান শুরু হয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সর্বাচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিসীমায় রেলওয়ে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে। রবিবার পূর্ণগতি দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আগামিকাল সোমবারও রেল সেতুতে পূর্নগতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে ভুলত্রুটি সনাক্ত করা হবে। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই রেলসেতুটি উদ্ধোধন করা হবে।
প্রকাশ, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পরেই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযাগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হয়। এসব সমস্যা সমাধানে বিগত সরকার ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাচুর্য়ালি যুক্ত হয়ে রেলসেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রথম প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশিয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইটারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের সংযোগকারী এই রেল সেতুর নাম ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু’ নির্ধারণ করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর গত ২২ ডিসেম্বর সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেল সেতু’ রাখা হয়।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.