
স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও দেশে চালের বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে। মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম, যা সাধারণ ভোক্তার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে (২৪ জুন), সরকারের গুদামে মোট ১৭ লাখ ১০ হাজার টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ১৩ লাখ ১৫ হাজার টন, ধান ২ লাখ ৮ হাজার টন এবং গম ২ লাখ ৬০ হাজার টন।
নওগাঁ, দিনাজপুরসহ প্রধান চাল উৎপাদনকারী এলাকায় মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০ টাকা, যা ২০ দিন আগে ছিল ৩৫০০ টাকা। একই সময়ে নাজিরশাইল ২৫ কেজির বস্তা ২০০০ টাকা এবং বিআর২৮ চালের ৫০ কেজির বস্তা ২৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে যথাক্রমে ২০০ ও ২০০ টাকা বেশি।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগে পাইকারি পর্যায়ে মিনিকেটের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ টাকায়, নাজিরশাইল ২১৫০ এবং বিআর২৮ জাতের চাল ২৯৫০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৮৭ টাকা, নাজিরশাইল ৯০ টাকা, বিআর২৮ ও পাইজাম ৬৫ টাকা এবং মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগের চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি।
কাওরান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে শুধু মিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে। তারা আগেই কৃষকের ধান কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।” খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, মিলগেটে দাম বাড়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, ফলে ক্রেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ বাড়ছে।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির দাবি, ধানের দাম মনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চাল উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাবেই পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়া অস্বাভাবিক। এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি তদারকি জোরদার করা উচিত।”
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঈদের পর থেকেই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। একজন সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, “চালসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাজার তদারকি চলছে। কেউ অসাধুভাবে দাম বাড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”