
বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সংকট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির মুখোমুখি। সরকারি তালিকায় থাকা ৩৫ প্রকার ওষুধের বিপরীতে রোগীরা পাচ্ছেন মাত্র কিছু সাধারণ ওষুধ। পাশাপাশি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত বলে দাবি করা হচ্ছে।
১৯৬২ সালে ৩৫ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই হাসপাতাল ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা হলেও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত জনবল এখনো অনুপস্থিত। সরকারি তহবিল থেকে কেনা আধুনিক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারবিহীন পড়ে আছে।
হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট—রুম সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, জরুরি বিভাগের সামনে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, প্রবেশপথ ও টিকিট কাউন্টারে ময়লার স্তূপ দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওষুধ কেনায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তা সঠিকভাবে ব্যয় হয়নি। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। হাসপাতালের উচ্চমান সহকারী ও হিসাব রক্ষক মাতুব্বর মো. রেজোয়ান হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক কর্মচারী ঘুষ গ্রহণ ও ভুয়া বিল তৈরি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলেছেন।
এক আউটসোর্সিং কর্মচারী আয়া শাহিনা বেগম জানান, তার বিল তোলার জন্য রেজোয়ান হোসেন তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা কেন নেওয়া হলো জানতে চাইলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
রোগী ও স্বজনরা জানান, ওষুধ তালিকায় থাকা অধিকাংশ ওষুধ না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং রোগীরা ক্রমেই সংকটে পড়ছেন।
অভিযোগ প্রাপ্ত মাতুব্বর মো. রেজোয়ান হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কারও কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করিনি এবং কাউকে চাকরিচ্যুত করার বা নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, আউটসোর্সিং কর্মচারী দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তাদের নির্দেশনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওষুধ সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, “জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রতিটি হাসপাতালে সাময়িক সংকট দেখা দেয়, যা শিগগিরই কাটিয়ে উঠা হবে।”
স্থানীয়রা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি বন্ধ ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা অবহেলা অব্যাহত থাকলে মোরেলগঞ্জের মানুষের জন্য চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।