
অনলাইন ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় হামলার ঘটনায় মুসলিম দেশগুলো আবারও ঐক্যবদ্ধ সামরিক জোটের উদ্যোগে এগোচ্ছে। দীর্ঘদিন আলোচিত “মুসলিম ন্যাটো” বা “আরব ন্যাটো” ধারণা এবার নতুন করে বাস্তব রূপ পেতে শুরু করেছে বলে আভাস মিলছে।
কাতারে হামলা ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
৯ সেপ্টেম্বর দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠকের সময় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। এতে হামাস নেতা খলিল আল-হায়ার ছেলে, কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী এবং কাতারের একজন কর্মকর্তা নিহত হন। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অল্পের জন্য রক্ষা পান। এ ঘটনার পর উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের আঞ্চলিক সীমারেখা অগ্রাহ্য করার বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে।
জরুরি বৈঠক ও যৌথ প্রতিরক্ষার সিদ্ধান্ত
১৫ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) জরুরি বৈঠক আহ্বান করে। প্রায় ৬০টি মুসলিম দেশ এতে অংশ নেয়। বৈঠকে অধিকাংশ নেতা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামরিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর একমত হন। পরবর্তী সময়ে, ১৯ সেপ্টেম্বর জিসিসির প্রতিরক্ষা কাউন্সিল বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয়।
সৌদি–পাকিস্তান চুক্তি
১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব ও পাকিস্তান একটি কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমিত নয়; বরং মুসলিম বিশ্বের সম্ভাব্য সামরিক জোটের ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও ভবিষ্যতে এ ধরনের চুক্তিতে যুক্ত হতে পারে।
পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা
মুসলিম সামরিক জোটের ধারণা নতুন নয়। ২০১৫ সালে মিসরের শার্ম আল-শেখে প্রথমবার ন্যাটোর ধাঁচে বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে নেতৃত্ব ও সদর দপ্তর নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের প্রভাব মোকাবিলায় অনুরূপ উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি।
প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ
সম্ভাব্য এই জোটের পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। আরব দেশগুলোর ভেতর রাজনৈতিক বিভাজন এখনো কাটেনি। ২০১৭ সালে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অবরোধ আরোপ করেছিল। পাশাপাশি নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, সদর দপ্তর কোথায় হবে—এসব প্রশ্ন এখনো অনিষ্পন্ন। তুরস্কের অংশগ্রহণ নিয়েও মতভেদ রয়েছে। এ ছাড়া অতীতে হুতিদের ড্রোন হামলার ঘটনায় জিসিসি কার্যকর সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যা কার্যকর যৌথ প্রতিরক্ষা কাঠামো গঠনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তবুও সাম্প্রতিক বৈঠক ও সৌদি–পাকিস্তান চুক্তি দেখাচ্ছে, মুসলিম দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়, যেখানে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভাব্য “মুসলিম ন্যাটো” এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর সফল বাস্তবায়ন হলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করতে বাধ্য করতে পারে।










