নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের নিরাপদ মজুত রয়েছে। বাজারেও সরবরাহ পর্যাপ্ত। কিন্তু মিলারদের দাদন বাণিজ্যের প্রভাবে বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কৃষকের মাঠের ধান মনপ্রতি ১১০০-১২০০ টাকায় কিনে গুদামজাত করেছেন মিলাররা। পরে সংকট দেখিয়ে নিজেরাই বাড়াচ্ছে দাম। আর ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মিল পর্যায়ে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তিন মাস ধরে চলছে এমন পরিস্থিতি। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হু হু করে বড়েছে দাম। খুচরা বাজারে এক কেজি মোটা চাল কিনতেও গরিবের ৬০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সরু চালের কেজি গিয়ে ঠেকেছে ৯০ টাকায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নেই তেমন কোনে তদারকি। ফলে নির্বিঘ্নে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মিলাররা। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস উঠছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের নিরাপদ মজুত রয়েছে। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত শেষ তথ্য মতে, গুদামে মোট ২২ লাখ ৮ হাজার ৯২৯ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চালের মজুত আছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৬ টন। পাশাপাশি গম আছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮১০ টন। সঙ্গে ধানের মজুত আছে ৮০ হাজার ৩১৩ টন। পাশাপাশি রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারেও চালের কোনো সংকট নেই। আড়ত থেকে শুরু করে খুচরা বাজারের প্রত্যেকটি দোকানে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের বস্তা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, বোরো মৌসুমে চালের দাম কখনোই বাড়ার কথা নয়। চালের দাম বাড়লে সব শ্রেণির মানুষের সমস্যা হয়। এর মধ্যে সব চাইতে বেশি কষ্টে থাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তদারকি জোরদার করতে হবে। শনিবার নওগাঁ, দিনাজপুরসহ একাধিক স্থানের মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয় ৩৮০০ টাকায়। যা তিন মাস আগেও ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাইল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকায়। যা আগে ১৮০০ টাকা ছিল। বিআর ২৮ জাতের চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ টাকা। যা আগে ২৭০০ টাকা ছিল। এছাড়া মোটা জাতের চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ টাকা। যা তিন মাস আগে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার রাজধানীর পাইকারি আড়ত কাওরানবাজার ও বাদামতলী গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬০০ টাকা। ২৫ কেজি বস্তার নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ২১৫০ টাকা। যা আগে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ কেজির বস্তা বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৯৫০ টাকা। যা তিন মাস আগে ২৭৫০ টাকা ছিল। এছাড়া স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকা। যা আগে ২৫৫০ টাকা ছিল।
কাওরানবাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। কৃষকের মাঠের ধান চাল হয়ে বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এখন সব ধরনের চালের দাম কমার কথা। কিন্তু উলটো বস্তায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। মিলারদের দাদন বাণিজ্য কারসাজিতেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তিনি জানান, এবার মিলাররা কৃষকের ধান মাঠ থেকেই কিনে নিয়েছে। পরে সংকট দেখিয়ে নিজেরাই ধান ও চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।,
রাজধানীর কাওরানবাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার ভালোমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৮৫-৮৭ টাকায়। যা আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা আগে ৮৫ টাকা ছিল। বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। যা আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা আগে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে চাল কিনতে জাহিদুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে সব ধরনের চালের দাম কমে। কিন্তু এবারই দেখলাম দাম অনেক বাড়তি। বাজারে যেন কোনো তদারকি নেই। কেউ যেন কিছু দেখছে না। চাল কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে।
একই বাজারে খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, মিলাররা ফের চালের দাম বাড়িয়েছে। তিন মাস ধরে তারা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। সেখান থেকে বাড়তি দামে এনে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সেই চাল দেশের বাজারে আসলে দাম কমতে থাকবে। মিলাররা তখন আর বেশি দামে চাল বিক্রি করতে পারবে না।
নওগাঁ জেলার চালকল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ধানের দাম অনেক বাড়তি। যে কারণে বেশি দামে ধান কেনায় চালের উৎপাদন মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। জিরাশাইল ধানের দাম মনপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। সঙ্গে কাটারি ধানের দাম মনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে নওগাঁয় পাইকারিতে কেজিপ্রতি চাল এক থেকে তিন টাকা বেড়েছে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা তিন পর্যায়ে তদারকি করছি। এছাড়া ঈদের পর থেকেই বাজারে তদারকি চলমান আছে। অবৈধভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।,
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.