জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ কর্মী মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছেন এক সংখ্যালঘু নারী। শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরায় মির্জাপুর পৌরসভার সাহাপাড়ার নারায়ন চন্দ্র সাহার মেয়ে উর্মিতা সাহা কলি সাংবাদিক সম্মেলনে ওই দাবি করেন।
গৃহবধূ উর্মিতা সাহা কলি সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বলেন, সোনারতরী নামক একটি এনজিওতে তার স্বামী পিটু দে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন। ওই এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম মির্জাপুরের আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমদ শুভর ঘনিষ্ঠ। তার বাবা রবিউল আলম স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা। মাঠ থেকে গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি, সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানতের টাকা এনে পিটু দে নিয়মানুযায়ী নির্বাহী পরিচালকের কাছে বুঝিয়ে দেন। প্রায় এক বছর আগে গ্রাহকদের প্রায় চার কোটি টাকা সংস্থা থেকে উধাও হয়ে যায়। অর্থ লোপাটের বিষয়টি আগেই জানতে পেরে পিটু দে এ বিষয় জানতে চাইলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন- এমপি সাহেব সব কিছুই অবগত আছেন। পরে এ ঘটনার দায় পিটু দের উপর দিয়ে আদালতে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন সোনারতলী এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, এর কিছুদিন পরে জানতে পারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিটু দে’র নামে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পরে পিটু বাড়ি ছাড়া হন। তাকে না পেয়ে আওয়ামীলীগ কর্মী মো. জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন বাড়িতে এসে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়। এ সময় তারা বাড়ির ভতরের আসবাবপত্র ভাংচুর এবং এক পর্যায়ে আমার ১২ বছরের একমাত্র মেয়ে উপমা দে-কে অপহরণের চেষ্টা করে। এ ঘটনার পরে এলাকার লোকজন আমাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখায়। মো. জাহাঙ্গীর আলমের এনজিওর কিছু গ্রাহক ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমার বাড়িতে মাঝে মাঝেই হামলা চালায়। বাড়ির কাছে মদিরসহ বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে। আমাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে আমি হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করি। এরপরে আমি থানায় দুইটি সাধারণ ডায়রি করি। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। আমার নামেও মামলা করা হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়। অনেকে পরামর্শ দেয়- আমার স্বামী পিটু দে-কে ডিভোর্স দিলে হয়তো আমার নামে মামলা করা হবেনা।
গৃহবধূ উর্মিতা সাহা কলি বলেন, এমতাবস্থায় কোন কুল-কিনারা না পেয়ে আমি স্বামীকে তালাক দেই। কিন্তু তাতেও আমি রেহাই পাইনি। প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ছয়মাস আত্মগোপন থাকার পরে পিটু দে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ১৫ দিন আগে নিম্ন আদালতে হাজির হতে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পিটুকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাঁধার মুখে তারা ব্যর্থ হয়। ওই মামলায় পিটু দে কারাগারে রয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক সংসদ সদস্যর স্ত্রাসীরা আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফলে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি বলেন, এহেন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার করে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের সুনজরে আনার দাবি জানাই।
ওই সাংবাদক সম্মেলনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন ইলেক্টনিক ও সমাজ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.