
মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে অবৈধভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে সদর উপজেলার তিনটি গ্রাম ও শত শত হেক্টর কৃষিজমি। নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে বসতভিটা, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো গ্রামবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বারবার অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধামকির মুখে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এর ফলে আশপাশের ১০-১৫টি গ্রামে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর মধ্যবর্তী ও তীর ঘেঁষা স্থানে একাধিক ড্রেজার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এসব মেশিনের সঙ্গে যুক্ত বাল্কহেডের মাধ্যমে দিনরাত বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিটি বাল্কহেডে রয়েছে ১০ থেকে ১২ জন পাহারাদার। ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে নদীর পার ভেঙে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী রাজিব মণ্ডল, রবি মণ্ডল, আলিম আকন, সিরাজুল হাওলাদার, মকসেদ আকন, ইলিয়াস আকন, লালমিয়া হাওলাদার, সুমন মণ্ডল, নিখিল বাড়ৈসহ অনেকে জানান, তাদের জমি ও ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। কেউ কেউ বলেন, তিন কানি জমির মধ্যে দুই কানি নদীতে চলে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস আকন বলেন, “আগে নদী ছিল অনেক দূরে, এখন নদী ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে। গবাদিপশু নিয়ে নদী পাড় হওয়াটাও এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।”
আরেক কৃষক জলিল বেপারী বলেন, “আগেও ভাঙন হতো, কিন্তু এবার যে পরিমাণে হচ্ছে তা ভয়াবহ। নদী গিলে নিচ্ছে প্রতিদিন জমি। আর সব কিছুর পেছনে ড্রেজারই দায়ী।”
অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রভাবশালী চক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ঝাউদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আবুল হাওলাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া সাবাব বলেন, “নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”