
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ঋণনির্ভর যে কয়টি মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে অনিয়মের অভিযোগে কয়লা আমদানিতে গত জুলাই মাসে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে কয়লা আমদানি। এদিকে বর্তমানে মজুত থাকা কয়লা দিয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাত্র এক মাস উৎপাদন চালু রাখা যাবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে প্রকল্পের ভেতর থেকে কোটি কোটি টাকা দামের মূল্যবান বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তার মধ্যে গত ৩১ আগস্ট ১৫ কোটি টাকার তামার কেবলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় প্রকল্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করেছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয় মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পের দুটি কেন্দ্র ২০২৩ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে দুই দফায় চালু হয়। ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৬ ইউনিট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা।
চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় আগস্টের মাঝামাঝি। তাদের সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। যা দিয়ে আর এক মাসের মতো উৎপাদন চালু রাখা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে বেআইনি সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করেন।
এতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানি।
কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন,আইনগত বিষয়গুলো আমাদের ঢাকা হেড অফিস থেকে দেখা হচ্ছে। তাই সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টন; যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র এক মাসের মতো। কয়লা আমদানি করা না গেলে এটি হয়তো এখানেই বন্ধ করে দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি।’
এদিকে প্রকল্প এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা দামের বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে গত ৩১ আগস্ট পাচারকালে ১৫ কোটি টাকার তামার কেবলসহ ৫ জনকে আটক করেন প্রকল্পের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও মীর্জানুল ইসলাম বলেন, শুধু ৩১ আগস্ট নয়, এর আগেও পসকোর নাম ব্যবহার করে দুই কনটেইনার মালামাল বের করেছিলেন প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা রাতে প্রকল্পে ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’