
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান (মখা) আলমগীর এবং তার পরিবারের নামে ৭৯টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান মিলেছে। এসব হিসাবে জমা-উত্তোলন মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭টি হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের বড় অংশ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের তৎকালীন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতির হিসাব থেকেও বিপুল অঙ্কের টাকা মহীউদ্দীন আলমগীরের হিসাবে গেছে। পরে ওই অর্থ দিয়ে তিনি ও তার স্ত্রীর নামে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বর্তমানে এসব হিসাবে স্থিতি রয়েছে মাত্র ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক মাত্র চার বছরের মধ্যে ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মে ধসে পড়ে। চেয়ারম্যান হিসেবে মহীউদ্দীন আলমগীরের বিরুদ্ধে নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে ঋণ অনুমোদন, কমিশন বাণিজ্য ও নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী সময়ে তিনি এবং বাবুল চিশতি পদত্যাগে বাধ্য হন।
২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হলেও আর্থিক সংকট কাটেনি। লাখো গ্রাহক এখনও তাদের আমানত ফেরত পাননি। বর্তমানে মখা আলমগীরের ২.৫০ কোটি শেয়ার রয়েছে ব্যাংকটিতে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকেই।
বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা এএফএম শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপির ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে মহীউদ্দীন আলমগীরের হিসাবেও গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) আরও অনুসন্ধানের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে।
অন্যদিকে, আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে ফারমার্স ব্যাংকের প্রায় ১৬০ কোটি টাকার মামলায় বাবুল চিশতি ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতিকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তারা বর্তমানে কারাগারে থাকলেও মহীউদ্দীন আলমগীর পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।