নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা ভুয়া তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় একাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করলেও তারা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র।
পুলিশ জানায়, কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোহিঙ্গা হাফেজ আহমদ (৫০) ভুয়া তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি সংগ্রহ করেছিলেন। ২০১৯ সালে এ ঘটনায় মামলা হলে তিনি ছয় মাস কারাভোগ করেন। কিন্তু মুক্তির পরও তিনি পরিবারের সদস্যদের নামে এনআইডি তৈরি করেন। সম্প্রতি তাঁর মেয়ে জান্নাত আরার নামে এনআইডি (নম্বর-৯১৭৯০৯৯৭৪৩) ও পাসপোর্টের আবেদন করার ঘটনাও ধরা পড়ে। হাফেজ আহমদের স্ত্রী সনজিদা বেগমও একই মামলায় কয়েক মাস কারাভোগ করেছেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়ন নিয়েও নতুন করে এনআইডি সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছেন হাফেজ আহমদ। এ ছাড়া কক্সবাজারের সৈয়দ আলম নামের আরেক রোহিঙ্গাও এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরির চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানানোর চেষ্টার ঘটনাও ধরা পড়েছে। গত জানুয়ারিতে উখিয়ার দুই রোহিঙ্গা নারী—রাবেয়া খাতুন রাফিয়া (১৬) ও মারজান বিবি (২২)—ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করলে তারা আটক হন। অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, দালাল চক্র আবেদনকারীর ছবি পরিবর্তন করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
এদিকে রোহিঙ্গারা স্থানীয় এলাকায় জমি কিনে বসতিও গড়ছে। কক্সবাজার শহরের হালিমাপাড়ায় বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গা আজিজার মেয়ে রেসমিকা বেগম বর্তমানে স্থানীয় বালিকা মাদরাসার নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তবে ভর্তি নথিতে নাগরিকত্ব সনদসহ প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই শত শত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। ভবিষ্যতে তারা পরীক্ষার সনদ নিয়ে সরকারি চাকরিতেও ঢুকে পড়ার সুযোগ পেতে পারে। তিনি জানান, গত ৮ মে নয়জন রোহিঙ্গার ভুয়া এনআইডি সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব কার্ডে প্রকৃত মা-বাবার নামও সঠিকভাবে নেই, তবু তারা সনদ পেয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, দালালচক্রের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের এভাবে বাংলাদেশি পরিচয় নেওয়া শুধু নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.