নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে অতিরিক্ত ভিড় ও পরিবেশগত চাপ কমাতে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করে সরকার। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এ উদ্যোগ মানবিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই প্রত্যাশিত ফল দেয়নি।
বিশ্বব্যাংকের “বিয়ন্ড ক্যাম্পস অ্যান্ড কমিউনিটিজ: দি ইকোনমিকস অব রিফিউজি রিলোকেশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাসানচরে প্রতি শরণার্থীর বার্ষিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৮১০ মার্কিন ডলার, যেখানে কক্সবাজারে এ ব্যয় ৪৩০ থেকে ৫৮০ ডলার। খাদ্য সহায়তায় ভাসানচরে মাথাপিছু বছরে ৪৭০ থেকে ৫৬৫ ডলার খরচ হলেও কক্সবাজারে এ খরচ ১৫০ থেকে ১৮০ ডলারের মধ্যে।
গবেষণা অনুযায়ী, ভাসানচরে স্থানান্তরিত পরিবারগুলোর খাদ্য গ্রহণের মান কক্সবাজারের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কমেছে, খাদ্যের বৈচিত্র্য ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং দৈনিক খাদ্য গ্রহণ প্রায় ৪৭ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি মাঝারি থেকে গুরুতর বিষণ্নতায় আক্রান্তের হার বেড়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং শারীরিক অসুস্থতার হার ১৭ শতাংশ বেশি।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ভাসানচরের অবস্থা পিছিয়ে। সেখানে শ্রমিকদের গড় আয় কক্সবাজারের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ কম। খাদ্য সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়ার হার ৩৮ শতাংশ কম।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এর মূল কারণ ভাসানচরের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা। মূল ভূখণ্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এ দ্বীপে বাজার, শ্রমবাজার কিংবা সরবরাহ চেইন গড়ে ওঠেনি। ফলে সব ধরনের সেবা ও পণ্য সরবরাহ পুরোপুরি বাইরের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, “ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হয়নি।” তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত পর্যায়ে এ রিলোকেশন প্রয়োজন ছিল এবং এতে সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে।”
সব মিলিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ভাসানচর মডেল মানবিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে টেকসই নয়। বরং এটি ব্যয়সাপেক্ষ একটি উদ্যোগে পরিণত হয়েছে, যার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.