‘ভাষা আন্দোলনকে যেভাবে প্রভাবিত করেছিলেন লেখক-সাহিত্যিকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাতৃভাষায় কথা বলার দাবিতে যখন আন্দোলন চলছে তখন পূর্ববাংলারই অনেক বাঙালি-অবাঙালি অভিজাত শ্রেণির কেউ কেউ উর্দুর সপক্ষে। শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজের একটি বড় অংশও সে ভাবধারাকে সমর্থন করত। ফলে এদের মনোভাব পরিবর্তন করা ছিলো জরুরী। কারণ সমাজের এ মনোভাবের পরিবর্তন করতে না পারলে ভাষা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সাফল্য পেত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর সে ক্ষেত্রে লেখকরা এ মনোভাবের পরিবর্তন এনেছিলেন তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে।

কবি ফররুখ আহমদ তার ‘পাকিস্তান: রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখেন-গণতান্ত্রিক বিচারে যেখানে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষাকে পর্যন্ত যারা অন্য একটি প্রাদেশিক ভাষায় রূপান্তরিত করতে চান, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। পূর্ব পাকিস্তানের সব অধিবাসীর সঙ্গে আমিও এক প্রকার অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

কাজী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যদি গায়ের জোরে উর্দুকে বাঙালি হিন্দু-মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রভাষা রূপে চালানোর চেষ্টা হয়, তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ ধূমায়িত অসন্তোষ বেশিদিন চাপা থাকতে পারে না। শিগগিরই তাহলে পূর্ব-পশ্চিমের সম্বন্ধের অবসান হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

‘বাংলা ভাষাই হইবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা’ প্রবন্ধে আবুল মনসুর আহমদ লেখেন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ রাতারাতি ‘অশিক্ষিত’ ও সরকারি চাকরির অযোগ্য বনিয়া যাইবেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ফার্র্সির জায়গায় ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করিয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম শিক্ষিত সমাজকে রাতারাতি ‘অশিক্ষিত’ ও সরকারি কাজের ‘অযোগ্য’ করিয়াছিল।’

১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কবি সুফিয়া কামাল। তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘ভালোবাসুন, দেশকে ভালোবাসুন, দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসুন, আজকের দিনে আমার মতে সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক এককথায় বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিবানদের সামনে এ ভালোবাসার মন্ত্র ছাড়া আর কোনো মন্ত্র নেই, এ ভালোবাসার শপথ ছাড়া কোনো শপথ নেই।’ পূর্ববাংলাব্যাপী যে নতুন সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, সুফিয়া কামালের ভাষণে তার ইঙ্গিত ছিল।

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সেদিনই ওই মঞ্চে বলেন, ‘হুসেন শাহ, পরাগল খাঁ, ছুটি খা ও অন্যান্য বহু খান-পাঠান নৃপতিগণ ইহা হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন যে, রাজত্ব স্থায়ী করিতে হইলে দেশের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। ইহা তাহারা উপলব্ধি করিয়াছিলেন বলিয়াই নিজেদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্য রচনায় উৎসাহ দিয়াছিলেন। ভাষার নিপীড়ন চালাইলে পাঠান-মোগল শাসন অনেক আগেই ধ্বংস হইয়া যাইত- কয়েক শতাব্দী তার অস্তিত্ব থাকিত না।’

এভাবে লেখক-সাহিত্যিকদের দৃঢ়তাপূর্ণ ভূমিকা বাঙালি মানসকে তৈরি করছিল, যার কারণেই ২১ ফেব্রম্নয়ারি একটি অসাধারণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তারা। আর সব শ্রেণির সমর্থনে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো পূর্ববাংলায়।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় ভারত: হাইকমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প ২০৪১ সামনে রেখে বিভিন্ন ইতিবাচক বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয়

দুই যুগ পর দেশে ফিরে বৃদ্ধাশ্রম খুঁজছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা ইসমাইল 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই যুগ পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা ইসমাইল আলী। তবে কর্মক্ষম অবস্থায় নয়, ফিরেছেন পঙ্গু হয়ে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে হারিয়েছেন স্বজনদেরও।

নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে দল ছাড়ার ঘোষণা আওয়ামী লীগ নেতার

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে নির্মিত নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গোলগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের

এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ডিসেম্বরে

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৬ সালে তা ডিসেম্বর মাসে শুরু হবে।

মতিঝিলে দলের পরিচয়ে চাঁদাবাজি, বিএনপির মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করা দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সোমবার (১৪ এপ্রিল), মতিঝিল থানায়

কক্সবাজারে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক: খরা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই কক্সবাজারে পানীয় জলের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুকিয়ে গেছে জেলার ১ লাখ ৩০ হাজার অগভীর নলকূপের পানি। আর