আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ও বিজেপির মধ্যে। বিষয়টি এবার রাজনীতির বাইরে গিয়ে ছুঁয়েছে জাতীয় সংগীত নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জন গণ মন’ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশটিতে।
বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে কর্ণাটকের বিজেপি নেতা বিষ্ণেশ্বর হেগড়ে কাগেরির বক্তব্যকে ঘিরে। তিনি বলেন, ‘বন্দে মাতরম জাতীয় সংগীত হওয়া উচিত ছিল।’ আরও বলেন, ‘জন গণ মন মূলত ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের স্বাগত জানাতে লেখা হয়েছিল।’
এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি একে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি অপমান হিসেবে দেখছে। বিজেপি নেতা পরে অবশ্য মন্তব্য প্রত্যাহার করে বলেন, তিনি ‘অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক’ দীর্ঘায়িত করতে চান না।,
তবে ততক্ষণে রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূল অভিযোগ তোলে, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে খুশি করতে তৃণমূল সরকার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘বন্দে মাতরম’ উদযাপন থেকে বিরত থেকেছে।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা একটি সম্প্রদায়কে খুশি রাখতে চাইছে বলেই এই অনুষ্ঠানকে বড় করে উদযাপন করছে না। আমরা জানি পশ্চিমবঙ্গে কী হয়। আমরা জানি, তিনি কাদের পাশে দাঁড়ান। আমরা সর্বত্র বন্দে মাতরম উদযাপন করছি।’
যেদিন রাজ্যজুড়ে বিজেপি কর্মীরা বড় আয়োজনে ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর উদযাপন করে, সেদিন তৃণমূল কংগ্রেস সীমিত আকারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। দলটি জানায়, বিজেপি ‘রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য’ বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করাচ্ছে।
তৃণমূল জানিয়েছে, রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্মানে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি তারা অভিযোগ তোলে, বিজেপি ইতিহাস বিকৃত করছে। কারণ, কিছু বিজেপি নেতা দাবি করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জন গণ মন’ ব্রিটিশদের খুশি করার জন্য লিখেছিলেন, যা ইতিহাসবিদরা ইতোমধ্যেই ভুল প্রমাণ করেছেন। আজ (শনিবার) তৃণমূল কংগ্রেস এই বিতর্কের প্রতিবাদে পথে নামবে। তৃণমূল নেতা ড. শশী পাঞ্জা ও বিবেক গুপ্তর নেতৃত্বে দুপুর ১টায় যাত্রা শুরু হবে ঠাকুরবাড়ি (জোড়াসাঁকো) থেকে।
‘বন্দে মাতরম’ গানটি ১৮৭০-এর দশকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেছিলেন। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতীয়দের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠে। ১৯৫০ সালে সংবিধান সভা গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা না দিলেও অন্যতম জাতীয় গানের মর্যাদা দেয়। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, ‘বন্দে মাতরম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, তাই এটি জাতীয় সংগীতের মতোই সম্মানের যোগ্য।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজধানী দিল্লিতে ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং স্মারক ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ করেন।,
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.