
ডেস্ক রিপোর্ট: আসামের মরিগাঁও জেলার একজন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে শুক্রবার রাতে জোর করে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতর ঠেলে দিয়ে গেছে ভারতীয় পুলিশ। খায়রুল ইসলাম নামে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন যে, সোমবার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া ১৪ জনের মধ্যে তিনিও ছিলেন। বর্তমানে তিনি এবং বাকিরা দুই দেশের মাঝামাঝি নো ম্যানস ল্যান্ডে আছেন বলে জানা গেছে।,
ভাইরাল একটি ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, খায়রুল ইসলাম বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার কোনও একটি মাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বাংলাদেশের এক সাংবাদিককে বলেন, “আমি আসাম পুলিশকে বলেছিলাম, আমি একজন শিক্ষক এবং আমাকে সম্মান করতে। কিন্তু আমার হাত চোরের মতো বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং আমাকে বাসের মধ্যে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল। ভোর ৪টার দিকে, আমি এখানে পৌঁছাই। বিএসএফ মোট ১৪ জনকে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেয়।”
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামের থেংসালি খান্দাপুখুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত খায়রুল ইসলামকে ২০১৬ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে গৌহাটি হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এরপর তাকে মাটিয়া ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি দুই বছর কাটিয়েছিলেন এবং ২০২০ সালের আগস্টে জামিনে মুক্তি পান।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তার চ্যালেঞ্জ সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে খায়রুল ইসলামের মামলার শেষ শুনানি হয়েছিল গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর। গত ২৩ মে আসাম পুলিশ খান্দাপুখুরি গ্রামের খায়রুল ইসলামের বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং পুনরায় মাটিয়া আটক শিবিরে (ডিটেনশন ক্যাম্প) পাঠানো হয়। যেখান থেকে সোমবার অর্থাৎ ২৬ মে জোর করে বাংলাদেশের ভেতর ফেলে দেওয়া হয়।,
ট্রাইব্যুনালগুলি আসামের জন্য আধা-বিচারিক সংস্থা, যা নাগরিকত্বের মামলার রায় দেয়। যদিও এই সংস্থার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা এবং পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছোটখাটো বানান ভুল, নথির অভাব বা স্মৃতিশক্তির ত্রুটির ভিত্তিতে লোকেদের বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছি, আমার বাবা-মাও এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি ছোট থেকে আসামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছি। অথচ তারা আমাকে অন্যায়ভাবে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমি ১০০ বার বলেছি যে, আমি অসমিয়া (আসামের বাসিন্দা)।’’
এছাড়াও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান যে, সোমবার বিকাল ৩টার দিকে তাকে জোর করে মাটিয়া আটক শিবির থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মাটিয়া ক্যাম্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন বন্দিকে তিনটি বাসে তোলা হয়েছিল, তাদের চোখ বাঁধা ছিল। সীমান্ত পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের নিয়ে যায়।’’
ওই শিক্ষক বাংলাদেশি সাংবাদিককে আরও বলেন, “আমি আসতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে।”
তার স্ত্রী রিতা খানমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যখন মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তখন তারা কীভাবে এটি করতে পারে?’’