
অনলাইন ডেস্ক: তিব্বতের পার্বত্য অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করেছে চীন। ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর গড়ে তোলা এ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, এই প্রকল্প ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং সাংপো নদী তিব্বতের মালভূমি হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসামে প্রবেশ করে ‘সিয়াং’ ও ‘ব্রহ্মপুত্র’ নামে পরিচিত হয় এবং পরে বাংলাদেশে যমুনা নদী হিসেবে প্রবাহিত হয়।
প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ ‘মোতো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র’কে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে দাবি করছে চীন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি বর্তমান ‘থ্রি গর্জেস’ বাঁধের চেয়েও তিন গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে।
চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রকল্পটি স্থানীয় উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ভারত ও বাংলাদেশের আশঙ্কা—চীন এ বাঁধ ব্যবহার করে উজানের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু বলেছেন, “এই বাঁধ আমাদের আদিবাসী সমাজ, পরিবেশ এবং জীবিকার ওপর বিপর্যয় ডেকে আনবে। হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে পুরো সিয়াং উপত্যকা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।” তিনি একে ‘জলবোমা’র সঙ্গে তুলনা করেন।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে চীনের সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। বাংলাদেশও গত ফেব্রুয়ারিতে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, প্রকল্পটি ‘গ্রেট বেন্ড’ নামে পরিচিত অঞ্চলজুড়ে নির্মিত হচ্ছে—যেখানে ইয়ারলুং সাংপো নদী নামচা বরওয়া পর্বতের চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তীব্র গতিতে নিচে নামে। প্রকৌশলীরা নদীর গতি পরিবর্তন করে সুড়ঙ্গপথে জলপ্রবাহ চালিত করে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ‘পশ্চিম থেকে পূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ’ নীতির আওতায় তিব্বতের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।
তবে মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, এসব মেগা প্রকল্প তিব্বতের ভূমি, সম্পদ এবং জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের একটি উপায় মাত্র। এর আগে বাঁধবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় চীন শত শত তিব্বতিকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন—জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ও ভূমিকম্পপ্রবণ এই অঞ্চলে এমন বাঁধ নির্মাণ বড় ধরনের পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।
চীনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য নতুন কূটনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।