সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: জমিতে ফসল ফলানোর জন্য যেমন অভিজ্ঞ কৃষকের প্রয়োজন, তেমনি জনগণের মাঝে ভালো কিছু পৌঁছে দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা নিরূপণ করা জরুরি। এই জন্য সমাজের দর্পণস্বরূপ গণমাধ্যম কর্মীরা ভূমিকা পালন করে আসছে।
সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি- ভালো ও মন্দের প্রভেদ, সংশোধন বা সংস্কার, আদর্শ ও সভ্যতা, ভদ্রতা এবং সৃজনশীলতা, বিবেক-সম্মত মানবিক জ্ঞান, বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত, দৃঢ়তা ও বাস্তবায়ন- জনসার্থে মূল্যায়ন করে। মুক্ত চিন্তার প্রতিধ্বনি, যা মানবকল্যাণে প্রতিক্ষণে নিবেদিত, এমন একটি কর্ম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছে গণমাধ্যমে। যা সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে পরিচিত এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বা সমাজের দর্পণ হিসেবে স্বীকৃত।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় বর্তমানে এই গণমাধ্যম বা সামাজিক দর্পণে আমরা কী দেখছি? ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলমান ঘটনার বাস্তব চিত্র বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে উল্টাপাল্টা করে, ইচ্ছেমতো চিত্র তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। সমাজ দর্পণে যা আইনগত ব্যবস্থার প্রয়োজনে গুজব হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এমন বিভ্রান্তিকর মিথ্যার সূচি তৈরি করে প্রতিনিয়ত সমাজ দর্পণে অহেতুক নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়ে কলঙ্কিত করছে সাংবাদিক পরিচয়ধারী কিছু ব্যক্তি। প্রশ্ন হলো- এর জন্য দায়ী কে? বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত যন্ত্র, নাকি অজ্ঞ ব্যক্তিদের অসভ্যতা ও কর্মকাণ্ড?
বেলকুচিতে গণমাধ্যমে ঢুকে পড়েছে কিছু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা পেশিশক্তিধারী ব্যক্তি। তারা নানা তাণ্ডব শুরু করেছে এলাকার মানুষের মাঝে। এর চিত্র দেশের কোন মাধ্যমে প্রকাশ হবে তা ভাববার বিষয়। গণমাধ্যমকে কলঙ্কিত করতে এবং জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, কিন্তু এর প্রতিচ্ছবি দৃশ্যায়ন করবে কে?
তবুও বলতে হয়, সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে ও বিবেক-সম্মত জ্ঞানের আলোকে দেখা প্রয়োজন- সমাজব্যবস্থার বেহাল অবস্থা ও শৃঙ্খল মানবসভ্যতা কীভাবে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। তা সচিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি একটি অজ্ঞ ব্যক্তির বিজ্ঞ ভাবকে হাস্যকর ও ব্যঙ্গাত্মকভাবে সামাজিক মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। উপজেলার তামাই কুঠিপাড়ার মজিবর রহমানের পুত্র মো. রেজাউল করিমকে নিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত।
তিনি স্যালো ইঞ্জিন চালিত (ভুডভুডি) গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন, পরে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের কাজ করতেন। সাংবাদিকদের সোর্স হিসেবে কাজ করা রেজাউল করিম এখন নিজেই সাংবাদিক পরিচয়ে এলাকার কিছু বেকার যুবককে নিয়ে সাংবাদিকতার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে ডজনখানেক সাংবাদিক নিয়ে সংগঠন করেছেন এবং এর নেতা হয়েছেন তিনি।
এলাকায় প্রচলিত একটি কথা আছে- “মোল্লা বাড়ির বিড়ালটিও সূরা জানে।” এই মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠা এই ভুডভুডি ও ভাড়ায় চালিত বাইকার রেজাউল করিম মোটরসাইকেলে সাংবাদিক স্টিকার লাগিয়ে প্রথমে এলাকায় চলাচল শুরু করে। এতে সাধারণ মানুষের কৌতূহল তৈরি হয়। ধীরে ধীরে তার সিন্ডিকেটভুক্ত আইডি কার্ডধারী অন্যান্য সাংবাদিকরা টাকার বিনিময়ে তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। তারা এলাকার প্রবীণ সাংবাদিকদের সাথে অনৈতিক আচরণ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হিংসাত্মক কার্যকলাপ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
এতে বহু প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বেলকুচি প্রেসক্লাবের সম্মানিত সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। রেজাউল করিম বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশ করে যাহা জনমনে গণমাধ্যমের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি করছে। সাংবাদিকতার পরিচয়ে অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে এই রেজাউল করিম।
জানাযায়, উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে গত ইউপি নির্বাচনে তার পক্ষে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আতাউর চেয়ারম্যান তার কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে রেজাউলের কাছ থেকে সালিশি প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত নেয়।
এছাড়া এলাকায় বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য প্রশাসনের হাতে লাঞ্ছিত হয়। এমনকি এলাকার লোকজন তাকে তার নিজ বাড়িতে মারধর করে এবং তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। এছাড়া রেজাউল করিম এফআইআরভুক্ত ছিনতাই মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন।
বেকার একদল তরুণকে নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বেলকুচি শাখা ও বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ক্লাব ট্রাষ্টসহ বিভিন্ন কমিটির নেতা তিনি। যার মাধ্যমে এলাকায় চাঁদাবাজি, মামলা-হামলায় পক্ষপাতিত্ব, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি-জমার বিরোধে পক্ষপাতিত্ব, মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়, মামলার আসামিদের ছাড়িয়ে আনার জন্য থানার দালালি, উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে পেশিশক্তি প্রদর্শন- এগুলোই এখন তার নিত্যদিনের কাজ।
এমন অবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেলকুচি প্রেসক্লাবের কোন গণমাধ্যম কর্মী নিজেদের সমালোচনার পাত্র হতে চান না। আর এই সুযোগে বেলকুচির গণমাধ্যমকে ধ্বংস করে সাধারণ মানুষের মনে প্রবীণ সাংবাদিকদের সততা, কর্মদক্ষতা ও সম্মানিত পেশাদারিত্বের সুনাম নষ্ট করছে।
সম্প্রতি গত ১৫ই সেপ্টেম্বর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের বদিউজ্জামানের পুত্র হাফিজুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন সাংবাদিক পরিচয়ধারি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে, যা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্তাধীন রয়েছে। এ বেপারে বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেজাউল করিমের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি বর্তমানে সে গা ঢাকা দিয়েছে।
বেলকুচি উপজেলাজুড়ে রেজাউল করিমের অনৈতিকভাবে সাংবাদিকতা পেশায় আসার কারণ এবং এর মাধ্যমে প্রবীণ সাংবাদিকদের মানহানিকর কার্যকলাপ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে স্থানীয় গণমাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিচার এবং জনগণের ক্ষতিসাধনের প্রতিকার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.