
জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী ঝুমঝুমের মা রজনী ইসলামের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবার, স্বজন ও স্থানীয়দের শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদীপুর গ্রামে নামাজে জানাজা শেষে রজনীর দাফন সম্পন করা হয়। এর আগে সকাল সাদিপুর গ্রামে শুশুরবাড়ীতে রজনীর মরদেহ নিয়ে আসা হয়।
নিহত রজনী ইসলাম উপজেলার সাদীপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে ঝুমঝুম ইসলাম পঞ্চম শ্রেণীতে ও ছেলে রাহান ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশানা করে। তারা দুজনেই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। তারা উত্তরায় পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করতেন। রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
নিহতের পরিবার ও স্বজনরা জানান, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটার পরপরই বিধ্বস্ত বিমানের পাশে বা ঘটনাস্থলে রজনী তার মেয়ে ঝুমঝুমকে খুঁজতে যান। এসময় বিমানের কোনো একটি অংশ তার মাথার পিছনে এসে আঘাত হানে৷ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর তাকে উদ্ধার করে সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তারা আরও বলেন, ঘটনা ঘটার পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর উদ্ধার দল নিহত রজনীর মেয়ে ঝুমঝুমকে উদ্ধার করে। এ খবর জানতেন না ঝুমঝুমের মা রজনী। তিনি ভাবছিলেন তার মেয়ে হয়তোবা এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এজন্য ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলের মা। মেয়েকে খুঁজতে গিয়েই প্রাণ গেল মায়ের। এরআগে মেয়েকে সাথে নিয়ে স্কুলে যায় মা। এদিন তার ছেলে স্কুলে গিয়েছিল না।
নিহতের স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি চিটাগাংয়ে কাজে যাচ্ছিলাম। চিটাগাং এয়ারপোর্টে পৌঁছনোর পর মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের খবর পায়। এরপর আমার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এরপর ঢাকায় ফিরে সিএমএইচ হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীর লাশ শনাক্ত করি। আমার মেয়ে ঝুমঝুম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে নিয়ে তার মা স্কুলে যায়৷ স্কুলে গাড়ি থেকে নামার ৫ মিনিট পরে এ ঘটনা ঘটে। এদিন অসুস্থতার কারণে ছেলে স্কুলে গিয়েছিল না। এরপর গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।
এ বিমান দুর্ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (মঙ্গলবার সকাল ৮টা) নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭ জনে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৮ জন।