অনলাইন ডেস্ক: উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত দেশে যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কানাডা। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো শিক্ষার্থী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দাপট সবচেয়ে বেশি। কানাডার সরকারি সংস্থা স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্যমতে, বর্তমানে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যা কানাডায় থাকা মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৯ শতাংশ। খরব টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
তবে সম্প্রতি কানাডার অভিবাসন ও শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্লাইবোর্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কানাডা সরকার ৫৫ হাজার ৫০০ ভারতীয় শিক্ষার্থীকে দেশটিতে পড়াশোনার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৮২ জন বা প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি। বর্তমানে তারা কোথায় লুকিয়ে আছেন বা কী করছেন, তা সম্পর্কে কানাডার সরকারের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
দেশটির সংবাদমাধ্যম টিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এই লাপাত্তা এবং নিরুদ্দেশ এসব শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কানাডায় এসেছিলেন, বাস্তবে সেগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই।
তবে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রতারণার শিকার বা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। মূলত, এই ২০ হাজার শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ পড়াশোনার জন্য নয়, বরং কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যেই দেশটিতে এসেছেন।
ফলে তারা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হয়ে অটোয়াসহ বিভিন্ন শহরে শ্রমঘন কাজ বা ‘অড জবস’ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তিনি অন্টারিওর ব্রাম্পটন শহরের একটি ‘বিখ্যাত’ কলেজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে এসেছিলেন। কিন্তু কানাডায় নেমে জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটি কেবল নামেই আছে এর কোনো শ্রেণিকক্ষ বা কার্যক্রম নেই।
তিনি জানান, ‘প্রথমে আমাকে বলা হয়েছিল যে ক্লাস শিগগিরই শুরু হবে, কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে মাস চলে গেল ক্লাস আর শুরু হয় না। পরে বুঝতে পারলাম যে প্রতারিত হয়েছি। ভারতে থাকতেই কোর্স ফি বাবদ চার লাখ রুপি পরিশোধ করেছিলাম, বাকিটা কানাডায় এসে দেয়ার কথা ছিল।’
এ ধরনের আরও বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে টিএনএন। গুজরাট থেকে আসা এক ‘শিক্ষার্থী’ বলেন, 'আমি নতুন কিছু করিনি। আমার এলাকার অনেকেই এভাবেই কানাডায় এসে স্থায়ী হয়েছে, আমিও তাদের অনুকরণ করেছি। আমি জানি এটি অবৈধ, তবে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এই পথই আমার একমাত্র উপায় ছিল। আমার পরিবার বিদেশযাত্রার জন্য ঋণ নিয়েছে, যা আমাকে শোধ করতে হবে।”
তিনি জানান, বর্তমানে তিনি দিনের বেলায় রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে এবং রাতে ফুড ডেলিভারি বয়ের কাজ করছেন, যাতে পরিবারের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন।
কানাডা সরকারের কড়া পদক্ষেপ: স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় অনিয়ম ঠেকাতে কানাডা সরকার কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে, তা নিয়মিতভাবে সরকারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভুয়া প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
যেসব শিক্ষার্থী তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কানাডায় অবস্থান করছে তাদের কড়া নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোন ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বৈধতা (লাইসেন্স) এক বছরের জন্য বাতিল করার বিধান চালু করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে অটোয়া সরকার শিক্ষার্থীদের নামে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।'