নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির কাউন্সিল হবে কি হবে না-এই নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় ফিরোজায় অবস্থান করছেন। নিজেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার তার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং দলের কিছু নীতি নির্ধারণী বিষয় নিয়ে তার মতামত জানতে চেয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিবের দায়িত্ব ছাড়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন। বেগম খালেদা জিয়া তাকে অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন এবং দ্রুত একটি কাউন্সিল করার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া এই পরামর্শে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি এখনই কাউন্সিল করার পক্ষে নন বলেই জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্বিতীয়বারের মতো বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে তিনি দলের অবস্থা, সাংগঠনিক বিভিন্ন পদ পূরণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন বলে জানা গেছে। আর এই সমস্ত বিষয় উত্থাপনের প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও একটি কাউন্সিল অধিবেশন করার জন্য নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা নিয়ে গতকাল লন্ডনে পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির এই নেতা এই মুহূর্তে কাউন্সিল করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বরং তিনি কাউন্সিল ছাড়াই বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণ এবং কমিটি রদবদলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়া মনে করেন যে, এসময় দল সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যস্ত। কাজেই এখন কাউন্সিল করাটা যৌক্তিক এবং সময়োচিত হবে না। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠন পুনর্বিন্যাস করা যাবে এবং সংগঠনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মতামতও জানা যাবে। তবে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বলেছেন, কর্মীদের মতামত জানার জন্য কাউন্সিলের দরকার নেই। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গেছে।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তারেক জিয়া কাউন্সিল ছাড়াই তার পছন্দের লোকজনকে বিভিন্ন পদে বসাতে চান এবং এই কর্মটি শেষ হওয়ার পর পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়াই তার মতামত।
নানা কারণে তারেক জিয়া এখন কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। বিশেষত ২০১৮ সালে তার নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, আবার ২০২৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত, দলের মধ্যে ঢালাও বহিষ্কার এবং অবিবেচকের মতো অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা, ২৮ অক্টোবর হঠাৎ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে প্রশ্ন আছে। যদি দলের কাউন্সিল ডাকা হয় তাহলে এই প্রশ্নগুলো প্রকাশ্যে উত্থাপিত হবে এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।'
দলের ভিতরে অনেকেই এখন অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থাকা উচিত। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের মতামত গ্রহণ করাও বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাস্তবে এ সব কিছুই হচ্ছে না। আর এই কারণেই কাউন্সিলের মাধ্যমেই বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তারেক জিয়ার ক্ষমতা খর্ব হতে পারে, তার অনেক সিদ্ধান্ত সমালোচিত হতে পারে। তাই তিনি কাউন্সিল না করে একটি অনুগত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে কমিটি বাণিজ্য খুব একটা ভালো মত সম্ভব না। তারেক জিয়ার কাউন্সিল না করার পিছনে এটিও একটি বড় কারণ। কারণ এখন যদি বিএনপিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য বা অন্য পদ গুলো পূরণ করা হয় তাহলে একক ভাবে তারেক জিয়া মোটা অংকের টাকা পাবেন। কিন্তু কাউন্সিল করা হলে বিএনপির কর্মীদের মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তারেক জিয়ার যে অর্থ উপার্জনের এজেন্ডা তা হোচট খেতে পারে। এ কারণে তিনি কাউন্সিল করার পক্ষে না। তবে খালেদা জিয়া যেহেতু কাউন্সিল করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাজেই বিএনপি শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.