
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৮ এর নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি ধোঁকা খেয়েছিল। ওই নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেটি ছিল একটি রাজনৈতিক ধোঁকা। এটি বিএনপি নেতারাই প্রকাশ্যে বলছেন। ড. কামাল হোসেনকে তারা মনে করেন ভারত, পশ্চিমা দেশ এবং আওয়ামী লীগের এজেন্ট। ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ফঁদে ফেলেছিল এবং সেই কারণেই তাদের একটা বড় রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছিল।
২০১৮ শুধু নয়, ২০১৪ সালে বিএনপির সিদ্ধান্ত একটি বড় রাজনৈতিক ধোঁকা। সে সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএনপি প্রতারিত হয়েছিল বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের পর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ওই নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হত। বিশেষ করে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে যে ছাড় দিয়েছিল সেই ছাড়টা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র পাল্টে যেতে বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। কিন্তু সেই সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী বা মহল বিএনপিকে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। নির্বাচনে না গেলে সরকারের পতন ঘটবে-এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়। সেই আশ্বাসও ছিল একধরনের ধোঁকা বা প্রতারণা।
বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বিএনপিকে কেউ কেউ প্ররোচিত করেছিল। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনেকেই বিএনপিকে বলেছিল যে বিএনপি যদি গোঁ ধরে থাকে, নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলেই শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে। পশ্চিমারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, সরকারের পতন ঘটবে। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা যাচ্ছে বিএনপি ধোঁকা খাওয়ার হ্যাটট্রিক করল। তারা টানা তৃতীয়বারের মতো রাজনৈতিক ভাবে প্রতারিত হল বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন। এবারে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে এর ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন।
বিএনপির অন্তত দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য মনে করছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো যে অবস্থানে ছিল তাতে সরকারের সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন বিকল্প ছিল না। এবার যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তা ২০১৪ বা ২০১৮ এর চেয়ে অনেক ভালো-এমনটি একান্ত আলাপে বিএনপি নেতারাও স্বীকার করেন। আর এই বিবেচনায় বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে আন্তর্জাতিক মহল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আরও সক্রিয় হতো এবং সেক্ষেত্রে নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফলাফল করত।
বিএনপির কোনো নেতা মনে করেন যে, এখন যে অবস্থায় বিএনপি আছে তার চেয়ে ৪০/৫০ আসন পেয়ে বিরোধী দলে থাকলেও সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলা সম্ভব হতো। কিন্তু এই সময় দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং বিভিন্ন মহল থেকে বিএনপিকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা স্বীকার করেছেন যে, বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার একটা আগ্রহ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেই এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না এবং সরকারের পতন হবে অনিবার্য। আর এরকম একটি বাস্তবতা থেকেই বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।’
বিএনপির ধারণা ছিল যে, নির্বাচনের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিবে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে। ফলে সরকারের পক্ষে পদ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এখন বিএনপি মনে করছে পুরো ব্যাপারটাই ভারতের কারসাজি। ভারত চায়নি যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। সরকারের জন্য চাপ সৃষ্টি হতো।
বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে সরকারকে জয়ী হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে কারচুপি করতে হতো। এর ফলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিদূরহ্ন হয়ে যেত। কিন্তু সেটি না করে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই সুযোগটি তৈরি করার পিছনে পাশের দেশ ভারত ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিএনপির একাধিক নেতা। তারা মনে করছেন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল এবং বিএনপিকে এমনভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যেন বিএনপি নির্বাচনে না যায়। আর এর ফলে বিএনপি আরেকবার প্রতারিত হল বলেই তারা মনে করছেন।’