
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তারকারী নেতা হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা ভারতের নির্বাসনকালেই আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে দূরে থাকাকালীন জেনেছেন দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং তার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়। প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা, বিরোধী রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়া এবং দল পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান ধরে রাখেন।
পটভূমি
১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরিবারের বিপর্যয় ও রাজনৈতিক পরিবেশের চাপের কারণে আওয়ামী লীগ সংগঠনগত দুরবস্থার মুখে পড়ে। একদিকে নেতৃত্বশূন্য দল, অন্যদিকে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে দলটি কার্যক্রম পুনর্গঠনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
দলের নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তন
১৯৭৬ সালে সামরিক সরকারের পলিটিক্যাল পার্টিজ রেগুলেশনের আওতায় নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। তবে নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য দলকে আরও দুর্বল করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক উপস্থিতি
দলের সভাপতি, বিরোধী দলীয় নেতা এবং পরপর তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। দীর্ঘ সময়ের ক্ষমতাকালীন নীতি, সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে দেশের শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত করে। একই সময়ে তার নেতৃত্বে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে দল ও সরকারের ওপর সমালোচনার প্রবাহ বাড়তে থাকে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। দলটির বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জনপরিসরে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দলটির সামনে সম্ভাব্য পুনর্গঠনের পথ এখন বাংলাদেশি রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নচিহ্ন।











