
নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের প্রস্তাবিত বাজেট পাশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা থাকলেও এনিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তারা বলছেন, ‘অর্থনীতির এত হিসাবনিকাশ বুঝি না, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটা আমাদের জন্য ‘বড় বাজেট’। তা না হলে সব কিছু তাদের জন্য যারা অর্থনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে।
সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বাজেট পেশ করেন।
সাধারণের দাবি, এই বাজেটে যে সব পণ্যের দাম কামনো-বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই তাদের প্রত্যাশা যাপিত জীবনের ব্যয় যেন কমে আসে এ লক্ষ্যেই সরকারকে বাজেট সাজানোর পরামর্শ তাদের।’
কারওয়ান বাজার মোড়ে রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাসিব আহমদ।
তিনি বলেন, বাজেট সম্পর্কে এত বুঝি না। লক্ষ কোটির হিসাব করতে গেলে মাথা ব্যথা শুরু হবে। তবে আমি বাজেট বলতে যা বুছি তা হলো জিনিসপত্রের দাম কমা-বাড়া।
তিনি বলেন, আমি সহজ করে যা বুঝি তা হলো- নিত্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ যদি এই বাজেটে নেয়া হয় তা হলে সেটাই আমাদের জন্য বড় বাজেট।
তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন ১ হাজার ১৫শ টাকা ইনকাম করি। কিন্তু দিন শেষে পকেটে কিছুই থাকে না। সয়াবিন তেলের দাম দিন দিন লাগামহীন হচ্ছে। এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ছে, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে। সংসার চালাতে গিয়ে এগুলো আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু নিত্য দিনের মিটাতে গিয়ে পকেটে কিছুই থাকে না। তাই বাজেটে যেন এসব বিষয়ে নজর দেয়া হয়, বলেন হাসিব।
আইনুল ইসলাম রাজধানীর পান্থপথে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ বহন করেন।
তিনি জানান, প্রত্যেক দিন তিনি আট ’শ থেকে ১ হাজার টাকা ইনকাম করলেও দিন শেষে টানাটানির সংসারের কোনো উন্নতি হয় না। বাজারে গেলে টাকা শুধু ফুরিয়ে যায়, সঞ্চয় করা যায় না কিছুই। বাজেট নিয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন ‘বাজেট দিয়ে কি হয়! এটা তো আমাদের জন্য না। এই খবর তো বড় লোকেরা জানেন। প্রতি বছের তো শুনি বড় বাজেট হয়। কিন্তু এতে আমাদের জন্য কি রাখা হয় বা আমাদের কি উপকারে আসে সেটাই তো জানি না। বাজেট বলতে বুঝি, যে টাকা ইনকাম করি সংসার চালিয়ে যদি পকেটে টাকা থাকে তাহলে সেটা আমার বাজেট। এসময় তিনি বলেন, সরকার যদি নিত্যপণ্যের দাম কমাতে পারে তাহলে বলবো আমাদের জন্য কি করেছে, বলেন তিনি।’
এদিকে, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায়ী মো. হানিফ বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে দেখলাম ইলেকট্রিক বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই বাড়ানোর ফলে আমরা আমার বাজারে ক্রেতাদের একটা অংশ হারাবো। কারণ বর্তমানে মধ্যবিত্তদের বড় একটা অংশের চাহিদা ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ব্লেন্ডার-জুসার-মিক্সার-গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি-ইস্ত্রি, রাইস কুকার-প্রেসার কুকার এসব পণ্যের উপর। কিন্তু এসব পণ্যে যদি দাম বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের মত সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তাই আমরা চাইবো সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেন দূরত্ব না বাড়ে সে অনুযায়ী বাজেট করতে।
ফার্মেসি ব্যবসায়ী সঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, এই বাজেটে ক্যানসারের ঔষধ, ইনসুলিন এর দাম কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে তা অবশ্যই ভালো দিক। এতে করে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় কমার ভালো একটা দিক এটি। অনেকে আছে টাকার অভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন হলে সহনীয় হবে। তবে তা কি পরিমাণ কার্যকরী হয় সেটা দেখার বিষয়।’