
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: দীর্ঘদিন ধরেই আয়-ব্যয়ের বিপুল ঘাটতি রেখেই বাজেট পেশ করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। তবুও প্রতি বছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। কেননা বাজেটের বড় একটি অংশই আসে নাগরিকদের দেয়া কর থেকে।
ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সব ধরনের প্রস্তুতি। আজ ৬ জুন বৃহস্পতিবার, জাতীয় সংসদে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। টানা চতুর্থ মেয়াদে গঠিত সরকারের প্রথম বাজেট এটি। যদিও, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট এটি। আর দেশের ইতিহাসে ৫৩তম বাজেট। বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চলতি অর্থবছরের চেয়ে টাকার অঙ্ক আরও বাড়িয়ে বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। আর এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট।
বাজেট এলেই ঘুরে ফিরে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত আকবর আলি খানের (১৯৪৪-২০২২) কথা। বাজেটকে তিনি নানাভাবে দেখেছেন ও বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, বাজেট হচ্ছে সংখ্যার খেলা এবং সংখ্যার খেলার এ বাজেটে প্রচারণাই বেশি।
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এ বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। স্বাভাবিকভাবেই এবার সংকোচনমূলক বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর তিনি জাতিকে উন্নয়নের মহাসড়কেও তুলে দেন। পূর্বসূরির পথ ধরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও নিজের প্রথম বাজেটে জাতিকে ‘সমৃদ্ধির সোপানে’ নিয়ে যান।
মহামারি কোভিড-১৯ এ পিষ্ট হওয়ায় এরপরই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নামতে হয় মুস্তফা কামালকে। পুনরুদ্ধার শেষে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু করেন। তার দেখানো পথ ধরেই বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নিজের প্রথম বাজেটে সংসদে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করতে যাচ্ছেন। নতুন অর্থবছরের বাজেটে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।’
যদিও, বরাবরেই মতোই নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়ছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে ব্যবহৃত নানা পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি কর আসছে। মানুষের জীবনধারণ যখন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, তখন স্বস্তি দেওয়ার জন্য সাধারণত করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার তা-ও বাড়ছে না। তবে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থকে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবারও।
এছাড়াও, শুল্ক বাড়তে পারে মুঠোফোনের রিচার্জের ওপর। ফলে ফোনে কথা বলতে গিয়ে মানুষকে আগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। পানি শোধন যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রীর ওপর শুল্ক-কর বাড়তে পারে। এতে খরচ বাড়বে মধ্যবিত্তের। ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর আবগারি শুল্কও বাড়ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে করছাড় খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রাজস্ব আদায়ের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে কিছু খাতে বিদ্যমান কর অব্যাহতি তুলে নেওয়া হবে।’