অনলাইন ডেস্ক: বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে একজন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলায়। অভিযুক্ত ২১ বছর বয়সী যুবক আমির শেখ, মালদার কালিয়াচক এলাকার বাসিন্দা। জীবিকার সন্ধানে তিনি রাজস্থানে যান এবং সেখানেই তাকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশ।
পরিবারের দাবি, বৈধ আধার কার্ড ও ভোটার আইডি থাকা সত্ত্বেও তাকে দুই মাস ধরে জেল হেফাজতে রাখা হয়। এরপর কোনো আদালতের রায় ছাড়াই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহায়তায় তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে আমির শেখকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে শোনা যায় “আমি ভারতীয়। আমাকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দিন।” ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর জালালপুরসহ মালদার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
আমিরের বাবা জেমস শেখ বলেন, “ভিডিও দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি, সে-ই আমার ছেলে। তার সব বৈধ পরিচয়পত্র আমাদের কাছে রয়েছে। তবু যদি একজন ভারতীয় নাগরিককে এভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
এ ঘটনার পর শুক্রবার আমিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক আসিফ ফারুক। তিনি বলেন, “এটা কেবল একটি পরিবারের নয়, গোটা বাংলার অপমান। এটি নিছক প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং একটি ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
মালদার জেলা প্রশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে তুলে ধরছে কীভাবে ভাষা, ধর্ম ও অভিবাসন পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এখন একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
তাদের মতে, এটি কেবল কোনো স্থানীয় ঘটনা নয়; বরং ভারতের নাগরিক অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অভ্যন্তরীণ সংহতির প্রতি এক গভীর প্রশ্নবোধক চিহ্ন। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নজরদারি এখন সময়ের দাবি।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.