
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বখ্যাত ভোক্তা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিঅ্যান্ডজি) বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈশ্বিকভাবে ব্যবসা পুনর্গঠন ও ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই বহুজাতিক কোম্পানি।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে পিঅ্যান্ডজি। দীর্ঘ তিন দশকের ব্যবসায়িক উপস্থিতিতে কোম্পানিটি প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে হবিগঞ্জের অলিপুরে একটি কারখানা স্থাপন করেছিল। সেখানে ‘জিলেট’ ব্র্যান্ডের রেজর উৎপাদন করা হতো। তবে ২০২5 সালের জানুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কোম্পানিটি ইতোমধ্যে জিলেট ইন্ডিয়া এবং স্থানীয় পরিবেশক ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডস লিমিটেড (আইবিএল)-এর সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করেছে। এতে বাজারে পিঅ্যান্ডজির পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপ ও বড় দোকানে দেখা গেছে, রেজর, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও শ্যাম্পুর মতো জনপ্রিয় পণ্যের মজুদ প্রায় শেষের পথে।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, “চুক্তির আওতায় আমরা পিঅ্যান্ডজির পণ্য উৎপাদন করতাম। জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। কারখানা ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত অবস্থায় আছে; তারা অনুমতি দিলে উৎপাদন পুনরায় শুরু করা সম্ভব।”
ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল সদস্যপদ প্রত্যাহার করেছে। ফিকির সাবেক প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী বলেন, “দেশের বাজার কাঠামোগত সমস্যা, প্রশাসনিক জটিলতা ও প্রতিযোগিতার ভারসাম্যহীনতার কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে না। পিঅ্যান্ডজির সিদ্ধান্ত সম্ভবত সেই বাস্তবতার প্রতিফলন।”
পিঅ্যান্ডজি সম্প্রতি পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া থেকেও ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকেরা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে নেতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালে দেশে এফডিআই স্টক ছিল ১৮ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে ১৮ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া শুধু বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি আস্থাকে নয়, ভবিষ্যতে নতুন বিনিয়োগ প্রবাহকেও প্রভাবিত করতে পারে।